বৈশ্বিক মেরুকরণে বাংলাদেশ: পশ্চিমের উদ্বেগ, পূর্বের অভিনন্দন
৯ জানুয়ারি ২০২৪যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ অন্য অনেক দেশের প্রতিনিধিদের অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছে আওয়ামী লীগ।
প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেয়ায় ইউরোপীয় কমিশনের দুঃখ
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ৯ জানুয়ারি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। বিবৃতিতে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে কমিশন।
ডিসেম্বরে ইইউ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসে। বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদন এবং সুপারিশ শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এই প্রতিবেদন প্রকাশে বাংলাদেশ সরকার সম্মত হয়েছে বলেও জানিয়েছে কমিশন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার চেতনায় আমরা নির্বাচনি অনিয়মের সময়মতো এবং পূর্ণ তদন্ত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই৷’’
আরো বলা হয়েছে, ‘‘রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রতি সম্মান এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপে যুক্ত হতে ইইউ সবাইকে উৎসাহিত করে৷ গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সেন্সরশিপ বা প্রতিহিংসার ভয় ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সেটা জরুরি৷’
ইউরোপ ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল বিষয় হিসাবে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ‘জিএসপি প্লাস’-এ বাংলাদেশের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি এবং রাজনীতি, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে কমিশনের বিবৃতিতে।
অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র
নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা ব্যক্ত করে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ৯ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ''এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি, সে বিষয়ে অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও একমত।''
তিনি আরো বলেন, ''যুক্তরাষ্ট্র খেয়াল করেছে যে, আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে জয় পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধী দলের কয়েক হাজার সদস্য গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন।''
সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি সহিংস আচরণ পরিহারের আহ্বানও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। বিভিন্ন সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে।
বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মান পূরণ হয়নি: যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ৯ জানুয়ারি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস- এফসিডিও। দপ্তরটির মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের সময়ে বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মান ধারাবাহিকভাবে পূরণ হয়নি।
ভোটের আগে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ''মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।''
সব দল অংশ নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট দেয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
তবে বিবৃতিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে, ''বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের মতপার্থক্য দূর করতে এবং একটি অভিন্ন উপায় খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করি। আমরা এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন অব্যাহত রাখবো।''
নির্বাচনকালীন সহিংসতায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ
জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ৯ জানুয়ারি উঠে এসেছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গও। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোটো নিনো জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে নিনো বলেন, ''নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচন চলাকালীন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বিগ্ন। তিনি সব পক্ষকে সব রকম সহিংসতা পরিহার এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে শ্রদ্ধা করার আহ্বান জানিয়েছেন।''
পথ পালটান: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওএইচসিএইচআর সোমবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি নবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক৷
বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, "ভোট শুরুর আগের কয়েক মাস হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে বা ভয় দেখানো হয়েছে৷ এই ধরনের কৌশল সত্যিকারের আন্তরিক প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন সব বাংলাদেশির মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং দেশে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷''
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কঠিন পথে গণতন্ত্র অর্জন করেছিল, সেটিকে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত করা যাবে না৷ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং আমি আন্তরিকভাবে আশা করবো এটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে। সকল বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে৷''
নানা দেশের অভিনন্দন
এরই মধ্যে নানা দেশের প্রতিনিধিদের অভিনন্দনের বন্যায় ভাসতে শুরু করেছেন টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের পরদিন, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি বেসরকারি ফল প্রকাশের পরই রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন্স, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
৯ জানুয়ারিও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের তথ্য অধিদপ্তর পিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গণভবনে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, মিসর, আলজেরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতেরা।
রাশিয়া অভিভূত
ভোটগ্রহণের আগে থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়েছে বলে মন্তব্য পাওয়া গেছে রাশিয়ার পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে। দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার আন্দ্রে ওয়াই শুটব বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আয়োজনও চমৎকার ছিল।
৭ জানুয়ারি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে শুটব বলেছিলেন, ‘'আমরা এক সন্ধিক্ষণে আছি। এখন এক মেরু থেকে বহু মেরুর বিশ্বে উত্তরণ ঘটছে। বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অবস্থা নেই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন নীতি গ্রহণ করবে। কেউ চাপিয়ে দিলে হবে না।''
এরপর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে ৮ জানুয়ারি দেখা করে তাকে মার্চে আয়োজিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রতিনিধিরা।
রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমর্থন দেবে চীন
বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ৮ জানুয়ারি গণভবনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। ৯ জানুয়ারি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ''নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় আমরা আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানাই। বন্ধুপ্রতিম ও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন দেবো। আমরা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।''
অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছে চীন।
অংশীদারত্ব জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের
ভারতের জ্যেষ্ঠ উপ নির্বাচন কমিশনার ধর্মেন্দ্র শর্মার নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তারা এরই মধ্যে নিজেদের মূল্যায়নে তুলে ধরেছেন। ভারতের নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে সেই মূল্যায়ন প্রেস নোট আকারে প্রকাশও করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''নির্বাচন পরিচালনা প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং এই সফর সহজতর করার প্রচেষ্টা করায় আমরা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে প্রশংসা জানাই। আমরা বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং ভোটগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা সেসব কেন্দ্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের তাদের ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে দেখেছি।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের বিজয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেন, ''সফলতার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করায় আমি বাংলাদেশের জনগণকেও অভিনন্দন জানাই। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী এবং জনগণকেন্দ্রিক অংশীদারত্ব আরো শক্তিশালী করে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।‘'
বৈশ্বিক মেরুকরণের টানাপড়েনে বাংলাদেশ?
নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দুটি পক্ষ। পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক দমনপীড়ন নিয়ে ছিল সোচ্চার, অন্যদিকে চীন-রাশিয়াসহ অন্য নানা দেশের পক্ষ থেকে ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান।
নির্বাচনের পরও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, সেটা নানা বিবৃতিতেই স্পষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই মেরুকরণ কী বার্তা নিয়ে আসছে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, এই মেরুকরণে বাংলাদেশের কোনো আশঙ্কার কিছু নেই। তিনি বলেন, ''মেরুকরণের প্রশ্নই উঠছে না। যেটা দেখা দরকার, জাপানও অভিনন্দন জানিয়েছে এবং ভারতও অভিনন্দন জানিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে যেটা বোঝায়, সেখানে জাপান আর ভারতকে তো ছাড়া যাবে না কোনোভাবেই। ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবেই তারা পরিচিত। মেরুকরণ হলে তো আর জাপান বা ভারত অভিনন্দন জানাতো না।''
অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বিবৃতিও অনেকটা ভারসাম্য বজায় রেখেই দেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ''তারা সমালোচনা করেছে যে এটা সুষ্ঠু হয়নি, ফ্রি-ফেয়ার হয়নি। একই সাথে তারা রিগ্রেট করেছে, যে কেন অপজিশন নির্বাচনে যায়নি। আবার এমনও বলেছে যে ভায়োলেন্সের ব্যাপারে যেন ইনভেস্টিগেশন করে সরকার। আবার এমনও বলেছে যে সরকারের সাথে তারা কতগুলো বিষয়ে তারা আগামীতে কাজ করে যাবে।’’
তিনি বলেন, ''বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের যেসব বন্ধু আছে, তাদের কথা নিয়েই তারা এসব কথা বলেছে। কিন্তু একাধিক দেশ যারা অভিনন্দন জানিয়েছে, সেগুলোও তে দেশ, তাই না? এখানে আমি কোনো মেরুকরণ দেখছি না। বাংলাদেশের নীতি 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নেই'। এখানে সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবে। এখানে বাইরের দেশ কী বললো, তাতে কিছু যায় আসে না।’’
অবশ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশকে কি বৈশ্বিক মেরুকরণে একটি পক্ষ নেয়ার দিকেই ঠেলে দেয়া হচ্ছে? উত্তরে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ''এখনও পর্যন্ত তো সেইরকমই মনে হচ্ছে। তার কারণ হলো, আমরা গত দুদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বন্ধুদের কাছ থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখছি এবং আমাদের এখান থেকেও প্রাথমিক যেসব মন্তব্যগুলো আসছে, তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচনের আগে থেকে যে বিভাজনটা ছিল, সেটা এখনও আছে। আমার মনে হচ্ছে, এই বিভাজনটাকে ধরে নিয়েই আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে আছে, তাতে এই ধরনের বিভাজনে যাওয়াটা আমাদের জন্য সমীচিন নয় বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। আমি মনে করবো সামনের দিনগুলোতে আমাদের চেষ্টা করা উচিত এই বিভাজনটা কমিয়ে আনার জন্য যাতে আমরা নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করি।’’
'বড়দের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়' বাংলাদেশ এক পক্ষ নিলে তাতে বাংলাদেশেরই বেশি বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলেও মনে করেন এই সাবেক রাষ্ট্রদূত।
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ''বাংলাদেশের স্বার্থ বাংলাদেশকেই দেখতে হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ অন্য কেউ দেখবে না। আমরা যদি মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থ অন্য কেউ দেখে দেবে, তাহলে আমরা অহেতুক নিজেদের জন্য বিপদ নিজেই ডেকে আনতে পারি বলে আশঙ্কা করছি। সে জায়গায় যাওয়া মোটেও উচিত হবে বলে মনে করছি না।''
'বিদেশি প্রভু' প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এই মেরুকরণকে কিভাবে সামলাবে তা আগামী দিনে নতুন সরকারের নানা পদক্ষেপ দেখলেই স্পষ্ট হবে। বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে জয় উপলক্ষ্যে অভিনন্দন জানাতে ৯ জানুয়ারি গণভবনে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশি প্রভুদের পরামর্শ মেনে চললে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে নেমেছিল। তাদের কিছু প্রভু আছে। তারা বাংলাদেশের জনগণকে চেনে না। প্রভুদের পরামর্শে বাংলাদেশে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।আমাদের কোনো প্রভু নেই। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের প্রভু ও শক্তি। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থাই আমাদের শক্তি।’’