বেসামরিক হতাহত নিয়ে লঙ্কান সেনাবাহিনীর স্বীকারোক্তি
৩ আগস্ট ২০১১বিগত ২০০৯ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘ ২৫ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে৷ তবে গৃহযুদ্ধের এই অবসানের ঘটনা রক্তপাতের মধ্য দিয়েই হয়৷ প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধ এলাকাতে ব্যাপক পরিমাণে বেসামরিক হতাহতের ঘটনার কথা জানায়৷ তবে এই বেসামরিক লোকগুলো কাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে সেটা নিয়ে এখনও চলছে পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি৷
যুদ্ধে তামিল গেরিলারা পরাজিত হলেও তাদের সমর্থক অনেক মানুষ বিদেশ থেকে শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তারা তাদের প্রকাশিত ওয়েবসাইটে বেসামরিক হতাহতের পরিমাণ ৪০ হাজার বলে জানায়৷ তবে এই সংখ্যা প্রমাণের মত যথেষ্ট আলামত এখনও জাতিসংঘ কিংবা অন্য কোন সংগঠনের হাতে এসে পৌঁছয়নি৷ অন্যদিকে লঙ্কান সরকার গৃহযুদ্ধের শেষ সময়টিতে সাত হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানায়৷ তবে জাতিসংঘ এখনও সেই বক্তব্যকে গ্রহণ করেনি৷
গৃহযুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের চাপ দিন দিন রাজাপাকসে সরকারের ওপর বেড়ে চলেছে৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও যুদ্ধে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের পরামর্শক্রমে এই ঘটনা নিয়ে লঙ্কান কর্তৃপক্ষ নিজেরা একটি অনুসন্ধান চালায়৷ এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশও করা হয়েছে৷ এই প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, যে গৃহযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এলটিটিইর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে৷ যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতার কারণে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিল, এমনটি বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ লঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন৷
শ্রীলঙ্কার সরকার বরাবরই দাবি করে আসছে যে তারা এলটিটিই গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে৷ প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনেও তার সাফাই গাওয়া হয়েছে, এমনটি অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর৷ কারণ বেসামরিক হতাহতের জন্য প্রতিবেদনটিতে মূলত তামিল গেরিলাদের দায়ী করা হয়েছে৷ তামিল গেরিলারা তাদের দখলে থাকা এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদেরকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছে এইসব ঘটনা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে৷ তবে যুদ্ধ চলাকালে লঙ্কান সেনাবাহিনীর ভূমিকা সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যুদ্ধ চলাকালে একটি হাসপাতালে লঙ্কান সেনাবাহিনী গোলা বর্ষণ করেছিল৷ শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে দাবি করেছেন ওই ঘটনা ইচ্ছাকৃত ছিল না৷ তিনি বলেন, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতেই স্পষ্ট যে লঙ্কান সেনাবাহিনী হাসপাতালটিকে লক্ষ্যবস্তু করেনি৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য এই ঘটনায় এখনও লঙ্কান সেনাদের জড়িত থাকার কোন প্রমাণ দিতে পারে নি৷
তা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, শ্রীলঙ্কা সরকার শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলো যে তাদের সেনারা বেসামরিক হতাহতের সঙ্গে জড়িত৷ তবে এরপরও তারা তাদের দায় দায়িত্ব অস্বীকার করছে৷ তিনি এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, যুদ্ধ চলাকালে নিরীহ তামিলদের বিরুদ্ধে লঙ্কান সেনাবাহিনী যে অপরাধ করেছে, তা আড়াল করার এটি হচ্ছে সর্বশেষ প্রচেষ্টা৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন