বুন্ডেসলিগায় লাব্বাডিয়ার যাযাবর জীবন
জার্মানির ৫৪ বছর বয়সি ব্রুনো লাব্বাডিয়া খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বুন্ডেসলিগার দশটি ক্লাবের সঙ্গে কাজ করেছেন, যা একটি রেকর্ড৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
বুন্ডেসলিগার প্রথম ক্লাব
তিন বছর দ্বিতীয় বিভাগে খেলার পর ১৯৮৭ সালে ২১ বছর বয়সে বুন্ডেসলিগার প্রথম বিভাগের দল হামবুর্গে যোগ দিয়েছিলেন স্ট্রাইকার ব্রুনো লাব্বাডিয়া৷ প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়েছিলেন৷ সবমিলিয়ে বুন্ডেসলিগায় তার প্রথম মৌসুমে দশ গোল করেন তিনি৷ কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমে গিয়ে মাত্র দশটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ গোল করতে পারেননি৷ তাই ১৯৮৯ সালে কাইজার্সলাউটার্নে যোগ দেন লাব্বাডিয়া৷
ট্রফি জেতা
কাইজার্সলাউটার্নে সাফল্য পেয়েছিলেন লাব্বাডিয়া৷ ৬৭টি বুন্ডেসলিগা ম্যাচে ২০ গোল করেছিলেন৷ ১৯৯০ সালে তার দল জার্মান কাপ জিতেছিল৷ আর পরের বছর জিতেছিল বুন্ডেসলিগা৷ সে কারণে বায়ার্ন মিউনিখের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি৷
বায়ার্ন ক্যারিয়ার
লাব্বাডিয়া যখন বায়ার্নে যোগ দেন তখন ঐ ক্লাবে খেলেন লোথার মাথাউস আর স্টেফান এফেনব্যার্গের মতো ফুটবলাররা৷ কোচ ছিলেন ইয়ুপ হাইঙ্কেস৷ তারপরও নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন লাব্বাডিয়া৷ গোলও পান৷ কিন্তু নতুন কোচ জিওভান্নি ত্রাপাত্তনি টাকা খরচ করে নতুন প্লেয়ার আনায় লাব্বাডিয়া এফসি কোলনে চলে গিয়েছিলেন৷ বায়ার্নের হয়ে ১৯৯৪ সালে বুন্ডেসলিগা জেতেন তিনি৷
অনেক গোল, কম সাফল্য
কোলনের হয়ে প্রথম মৌসুমে লাব্বাডিয়া ভালো করলেও দল হিসেবে বুন্ডেসলিগায় কোলন ছিল ১০ নম্বরে৷ এছাড়া জার্মান কাপের সেমিফাইনাল থেকেও কোলন ছিটকে গিয়েছিল৷ পরের মৌসুমের প্রথম হাফে কোনো গোল করতে না পারেননি লাব্বাডিয়া৷ তাই ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের জানুয়ারিতে ভেয়ারডার ব্রেমেনে চলে যান তিনি৷
ব্রেমেনে ভালো-মন্দ সময়
ব্রেমেনে একটা সময় যেমন অনেক গোল পেয়েছেন, তেমন আবার এমন সময়ও গেছে যখন কোনো গোল করতে পারেননি লাব্বাডিয়া৷ দলও বারবার ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছিল৷ তাই বেশ কয়েকবার কোচ পরিবর্তন করে ব্রেমেন৷ লাব্বাডিয়ারও আর সেখানে থাকা হয়নি৷
দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাওয়া
ব্রেমেনে সফল না হওয়ায় লাব্বাডিয়াকে দ্বিতীয় বিভাগের দল আর্মিনিয়া বিলেফেল্ডে চলে যেতে হয়৷ সেখানে প্রথম মৌসুমে ২৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি৷ দলও প্রোমোশন পেয়ে বুন্ডেসলিগায় খেলার সুযোগ পায়৷ বুন্ডেসলিগায় ৩৪ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেন লাব্বাডিয়া৷ কিন্তু দলকে রেলিগেটেড হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেননি৷
কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু
২০০৮ সালে বায়ার লেভারকুজেন দিয়ে বুন্ডেসলিগায় লাব্বাডিয়ার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয়৷ সেবার জার্মান কাপের ফাইনালে পৌঁছাতে পারলেও লিগ টেবিলে নবম স্থানে ছিল তার দল৷ তাই তার পরিবর্তে আরেকজনকে কোচ নিয়োগ দিয়েছিল লেভারকুজেন৷
আরেকটি কঠিন বছর
লেভারকুজেনের চাকরি হারিয়ে হামবুর্গের কোচ হয়েছিলেন লাব্বাডিয়া৷ সেখানে শুরুটা ভালো হলেও প্রথম মৌসুমের দ্বিতীয় হাফে দল ভালো করতে পারেনি৷ তাই মৌসুম শেষ হওয়ার তিন ম্যাচ আগেই তিনি বরখাস্ত হন৷
অবশেষে সফল
২০১০ সালের ডিসেম্বরে স্টুটগার্টের দায়িত্ব পান লাব্বাডিয়া৷ সেইসময় বুন্ডেসলিগায় ১৭ নম্বরে ছিল দল৷ সেই অবস্থা থেকে উন্নতি করে ১২তম অবস্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে স্টুটগার্ট৷ পরের মৌসুমে আরো সফল হন লাব্বাডিয়া৷ স্টুটগার্টের অবস্থান ছিল ছয়৷ ২০১৩ সালের জার্মান কাপের ফাইনালে উঠতেও সমর্থ হয়েছিল লাব্বাডিয়ার স্টুটগার্ট৷ কিন্তু পরের মৌসুমের শুরুটা খারাপ করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়৷
প্লেঅফ ড্রামা
২০১৫ সালের এপ্রিলে লাব্বাডিয়াকে কোচ নিয়োগ দেয় হামবুর্গ৷ সেইসময় রেলিগেশন বাঁচাতে কার্লসরুয়ের সঙ্গে প্লেঅফ খেলতে হয়েছে হামবুর্গকে৷ ম্যাচের শেষ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে কোনমতে বেঁচে যায় লাব্বাডিয়ার দল৷ পরের মৌসুমে পয়েন্ট তালিকায় মাঝামাঝি অবস্থানে ছিল হামবুর্গ৷ এর পরের মৌসুমের শুরুটা খারাপ হওয়ায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে বরখাস্ত করা হয়৷
বুন্ডেসলিগা ফায়ারম্যান
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভল্ফর্সবুগ রেলিগেশন লড়াইয়ে ছিল৷ সেখান থেকে পরবর্তী ১৫ মাসে দলকে ইউরোপা লিগে নিয়ে যেতে সমর্থ হন লাব্বাডিয়া৷ কিন্তু অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্যের কারণে আর চুক্তি বাড়াননি তিনি৷
রাজধানীতে লাব্বাডিয়া
বার্লিনের ক্লাব হ্যার্থা বার্লিনের কোচ হিসেবে খুব খারাপ করছিলেন জার্মানির জাতীয় দলের সাবেক কোচ ও সাবেক তারকা ফুটবলার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান৷ তাই তার পরিবর্তে নিয়োগ পেয়েছিলেন লাব্বাডিয়া৷ আর সেটা ছিল প্লেয়ার ও কোচ হিসেবে তার দশম বুন্ডেসলিগা ক্লাব৷ কিন্তু ২৮ ম্যাচে মাত্র আটটি জয় পাওয়ায় সম্প্রতি সেখান থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷