অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০অ্যান্টার্কটিকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার আগেই হিমবাহের উপর রানওয়ে চোখে পড়ে৷ ১০টি দেশের গবেষক তুষারে ঢাকা গ্রীষ্মকাল কাটাতে অ্যান্টার্কটিকায় যাচ্ছেন৷ বেলারুশের দলটি এ বছর বিশেষ বড় আকারের৷ সেই দলের সদস্য আলেক্সি জাভাটভ বলেন, ‘‘বেলারুশ এক বিশাল অ্যান্টার্কটিকা গবেষণা কর্মসূচি চালাচ্ছে৷ জীববিজ্ঞানী, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, ভূপদার্থবিদ এতে শামিল হচ্ছেন৷ এতকাল শুধু গ্রীষ্মকালীন স্টেশন ছিল৷ এবার শীত কাটানোর উপযুক্ত স্টেশনও তৈরি করছি৷’’
ভারতও এক বড় টিম পাঠিয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এখান থেকেই সে দেশের দুটি স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে পারেন৷ তাঁদের গবেষণার লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট৷ ‘মৈত্রী’ স্টেশনের বিজ্ঞানী জীব কৃষ্ণমালি বলেন, ‘‘জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণা এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প৷ এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা আমাদের কাছে জরুরি৷ তুষারের গভীরে ও হিমবাহের মধ্যে কী পরিবর্তন ঘটছে?’’
রুশ বিজ্ঞানীরা নয়মায়ার স্টেশনে জার্মানির সিসমোলজিস্টদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন৷ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এক জায়গায় সেটি অবস্থিত৷ অ্যান্টার্কটিকার গভীরে সেই গবেষণাকেন্দ্রে খুব বেশি বিজ্ঞানী যাতায়াত করেন না৷ ইওসেফিন স্টাকেমান ও এডিট কর্গার সেখানে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করেন এবং ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপেন৷ অন্যান্য দেশের গবেষকদের মতোই তাঁরা ১৫ মিটার গভীরে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ তবে তাঁদের মতে, এই পরীক্ষা যথেষ্ট নয়৷ স্টাকেমান বলেন, ‘‘মহাদেশ হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে আসলে এখনো যথেষ্ট গবেষণা হয় নি৷ আমার মতে, তথ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট কেন্দ্রও নেই৷’’
বায়ুমণ্ডলীয় রসায়ন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান মার্কুস শুমাখারও এমনটা মনে করেন৷ অ্যান্টার্কটিকার বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে চলায় তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ বিশেষ করে পৃথিবীর দক্ষিণে নির্মল এই মহাদেশটিতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করার আশঙ্কা তাঁকে ভাবাচ্ছে৷ কোনো রাষ্ট্রের অন্তর্গত না হওয়ায় সেখানে এমন কাজে কোনো বাধা নেই৷ শুমাখার বলেন, ‘‘কী ঘটবে, কীভাবে সবকিছু এগোবে, সেটা বলা অবশ্যই কঠিন৷ কোনো এলাকা থেকে বরফ সরে গেলে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের নাগালের মধ্যে এসে যাবে৷ তবে বহু বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল৷ আমার কাছে এটা ভালো লক্ষণ, যে বিষয়টি সে দিকেই এগোচ্ছে৷’’
নয়মায়ার কেন্দ্রের গবেষকদের কাছে এম্পারার পেঙ্গুইন বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে আগাম আভাস পেতে এই প্রাণীর রক্ত চলাচল যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করতে হবে৷ এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক গবেষক দলগুলি পরস্পরের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করছেন৷ ‘থিংক’ পরিবেশ সংগঠনের মারি-শার্লট রুমলার মনে করেন, ‘‘সব সময়ে বলা হয় এটা হলো অ্যান্টার্কটিক পরিবার৷ জগতের সব সংকট এখানে ম্লান হয়ে যায়৷ সবাই সবাইকে সাহায্য করে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেষ্টা চালু থাকে৷ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও এই মনোভাব দেখা যায়৷ বিশ্বের সব নেতিবাচক খবরের মাঝেও এমন সহযোগিতা দেখলে খুব সুন্দর লাগে৷’’
পৃথিবীর সবচেয়ে জনবিরল মহাদেশে এমনটা ঘটে চলেছে৷
মাটিয়াস এবার্ট/এসবি