বিশ্বজুড়ে গৃহকর্মীদের অধিকার
গৃহকর্মকে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই অন্যান্য কাজের সমান মর্যাদা দেয়া হয় না৷ কর্মীর কর্মঘণ্টা, জীবনযাত্রার মান, বেতনও নির্ধারণ হয় না সঠিকভাবে৷ অধিকার রক্ষায় নেই সরকারি কোনো উদ্যোগও৷
বাংলাদেশ
পশ্চিমা বিশ্ব এখন ঘরের কাজে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এই নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা৷ তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেদেশে ঘরের কাজের জন্য অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছেন গৃহকর্মী৷ যাঁদের মাসিক গড় বেতন ৫১০ টাকা৷ আর দিনে কাজ করতে হয় কমপক্ষে দশ ঘণ্টা৷
তানজানিয়া
তানজানিয়ায় গৃহকর্মীদের রক্ষায় বিশেষ কোনো আইন নেই৷ ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য যে আইন, সেটি তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য৷ অল্পবয়সি নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন৷ তাদের বেতনও সর্বনিম্ন বেতনের চেয়ে কম৷ আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকলেও সেটি বেশিরভাগ গৃহকর্মীই জানেন না৷
ফিলিপাইন্স
২০১০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ফিলিপাইন্সে ১৯ লাখ গৃহকর্মীর বয়সই ১৫ বছর বা তার চেয়েও কম৷ এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী৷ বেশিরভাগই অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে৷ কর্মক্ষেত্রেই তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ ২০১৩ সালে ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স অ্যাক্ট পাস করা হলেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি৷
পাকিস্তান
পাকিস্তানে অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ কিন্তু পাঞ্জাব সরকার একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে ২০১৪ সালে চালু করেছে গৃহকর্মী ইউনিয়ন৷ শুরুতে এতে মাত্র ২৩৫ জন সদস্য থাকলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ তবে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে, বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনও তা চালু হয়নি৷
ভারত
ভারতে গৃহকর্মীদের অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷ বিভিন্ন দরিদ্র অঞ্চল ও পরিবার থেকে আসায় শ্রমবাজার সম্পর্কেও তাঁদের ধারণা থাকে কম৷ বেতন বৈষম্য, জীবনযাত্রার নিকৃষ্ট মান, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার অভাব ছাড়াও সহিংসতা, যৌন হয়রানি এমনকি মানবপাচারকারীদের শিকারও হতে হয় গৃহকর্মীদের৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭ দিনই ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় তাঁদের৷
চীন
১৯৭৮ সাল থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চীনের নারীরা৷ প্রাইভেটাইজেশনের ফলে অনেক নারীর চাকরি চলে গেছে, কমেছে কর্মক্ষেত্রে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার হারও৷ নারীদের বেকারত্বের হার কমাতে সরকারি উদ্যোগে গৃহকর্মীদের উৎসাহী করা হয়৷ বর্তমানে দেশটির ৮৫ শতাংশ গৃহকর্মী নারী৷ কিন্তু তাঁদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার তো হতে হয়ই, সামাজিকভাবেও গৃহকর্মীদের দেখা হয় বাজে চোখে৷
সৌদি আরব
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই গৃহশ্রমিক আসেন এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে৷ স্বেচ্ছায় কাজ পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় এবং নিয়মিত সরকারি নজরদারি না থাকায়, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় ব্যাপকভাবে৷ ব্র্যাকের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ফেরত এসেছেন প্রায় ১০০০ নারী গৃহকর্মী৷