বিশ্বজিৎ হত্যায় ১৩ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এখনো ‘পলাতক'
৯ ডিসেম্বর ২০১৪২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দর্জি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী৷ আর এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে পুলিশের সামনেই৷ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ হলে শেষ পর্যন্ত মামলায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয়া হয়৷
চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন৷ রায়ে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জন হলেন: রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন৷ এদের মধ্যে রাজন তালুকদার ও মীর মোহাম্মদ নূরে আলম ওরফে লিমন পলাতক রয়েছেন, বাকিরা কারাগারে৷
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন মো. ওবায়দুল কাদের ওরফে তাহসিন, ইমরান হোসেন ওরফে ইমরান, মো. আলাউদ্দিন, মনিরুল হক ওরফে পাভেল, আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, খন্দকার মো. ইউনুস আলী ওরফে ইউনুস, তারিক বিন জহুর ওরফে তমাল, গোলাম মোস্তফা, কিবরিয়া, মোহম্মদ কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেএন ওরফে মোশারফ৷ এদের মধ্যে কেবল গোলাম মোস্তফা ও কিবরিয়া ছাড়া বাকিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি৷
নিহত বিশ্বজিৎ দাসের ভাই উত্তম কুমার দাস ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘হত্যার মামলার রায় ঘোষণার এক বছর পার হতে চললেও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ১৩ আসামিকে পুলিশ ইচ্ছা করেই গ্রেপ্তার করছে না৷ আদালত তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাদের গ্রেপ্তারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ নেই বলেই মনে হয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বিশ্বজিতের খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ তারপরও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে না৷ পুলিশ, আদালত ও সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷''
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ১৩ আসামির মধ্যে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর তমাল, ওবায়দুল কাদের, আজিজুর রহমান, মীর নূরে আলম লিমন, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন৷ তাদের মধ্যে রাজন তালুকদার এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন৷ ইমরান, পাভেল ও আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন দয়াগঞ্জ এলাকায় বসবাস করছেন৷
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রায়ের পর আর কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ তারা দেশের বাইরে আছেন, এমনটা শোনা গেছে৷ তবে আসামিদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়৷ কেউ সংবাদ দিলেও সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এভাবে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে৷''
উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা শুধু বিচারই চাইতে পারি এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা আমাদের নেই৷ ফাঁসির আসামিদের রায় দ্রুততম সময়ে কার্যকরের অনুরোধ করছি৷''
উল্লেখ্য, দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা কারাগারে আছে তারা এরইমধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে৷ এই আপিলের শুনানি শুরু হবে সহসাই৷ আপিল পর্যায়ে জামিনেরও চেষ্টা করছে তারা৷