বিবাহিত ছাত্রীরা যাবেন কোথায়?
২১ ডিসেম্বর ২০২১বিভন্ন ছাত্র সংগঠনও তাদের সমর্থন দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম তো রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। প্রভোস্ট কমিটি ও সিন্ডিকেটের বৈঠকে ছাত্রীদের দাবি পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং শামসুন নাহার হলে বিবাহিত বলে দুই ছাত্রীর সিট বাতিল করায় বিষয়টি সামনে এসেছে। সাধারণভাবে বিবাহিত ছাত্রীরা হলে থাকলেও তা চিহ্নিত হয় না। কিন্তু ওই দুই ছাত্রী সনাতন ধর্মের বলে করোনার পর তারা শাখা সিঁদুর পরে হলে আসায় তাদের চিহ্নিত করা হয় বলে জানান শামসুন্নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তবে ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে ওই সিদ্ধান্ত হল কর্তৃপক্ষ আপাতত স্থগিত রেখেছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পাঁচটি এবং ছাত্রদের জন্য ১৩টি হল আছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যায় প্রায় সমান সমান । ছাত্রদের হলে বিবাহিতদের থাকতে কোনো সমস্যা নেই। এটা শুধু ছাত্রী হলেই।
ছাত্রী হলের নীতিমালায় বলা হয়েছে,"কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে সিট বাতিল হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা কেউ হলে থাকতে পারবে না।’’
নীতিমালায় আরো আছে, ‘‘কোনো ছাত্রী চাকরি নিলে চাকরি গ্রহণের তারিখ হতে হলের সিট বাতিল হবে।’’ আর চাকরিরত হলে তাকে হলে সিট দেয়া হবে না।
কিন্তু এইসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে কোনো বাধা নেই। ছাত্রীরা বলছেন,"ছাত্রদের হলে এইসব নিয়ম কার্যকর নাই। ছাত্ররা বিবাহিত, চাকরিরত সবাই হলে থাকছেন।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন,‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি রক্ষণশীল সমাজের মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহলে তা দুঃখজনক।” তিনি বলেন,‘‘এখানে কোনো অসাম্য থাকতে পারেনা। ছাত্ররা যে সুযোগ পায় ছাত্রীদেরও সেই সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশের বাস্তবতায় ছাত্রীদের আরো বেশি প্রটেকশন দেয়া উচিত। কারণ বিয়ে হওয়ার কারণে অনেক ছাত্রীকে পরিবার থেকে পড়াশুনায় অসহযোগিতা করা হয়। তারপর যদি আবার হলেও থাকতে না পারেন তাহলে তারা যাবেন কোথায়?’’
ছাত্রীরা এরইমধ্যে উপাচার্যের কাছে চার দফা দাবি দিয়েছেন। এর মধ্যে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার নিষেধাজ্ঞা বাতিলসহ , আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানি বন্ধ এবং অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল সংসদের সাবেক জিএস সাগুফতা বুশরা মিশমা অভিযোগ করেন, ‘‘সাধারণ ছাত্রীদের ব্যাপারে এই নিয়ম থাকলেও যারা প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের নেত্রী তারা বিয়ের পরও হলে থাকছেন। পাস করে যাওয়ার পরও থাকছেন। তাদের কেউ কিছু বলেন না। ম্যাডামরা বলছেন, বিবাহিত মেয়েরা হলে থাকলে পরিবেশ নষ্ট হয়। তাহলে ছাত্রী হলের প্রভোস্ট , হাউজ টিউটররা বিবাহিত হয়ে হলের কোয়ার্টারে কীভাবে থাকেন?”
তবে এই নিয়ম পরিবর্তন হওয়া দরকার বলে মনে করেন শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, ‘‘এটা সব ছাত্রী হলের জন্যই পুরনো নিয়ম। হঠাৎ করে করা কোনো নিয়ম নয়। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। মেয়েরা স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাইলেই রাতারাতি এটা পরিবর্তন করতে পারি না। আমাদের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং-এ এটা আলোচনা হবে।”
তার হলের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীকে আমি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হলে থাকার অনুমতি দিয়েছি। তাকে বের করে দেয়া হয়নি।’’
আগামীকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। কমিটির প্রধান ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ‘‘অন্যান্য বিষয়ের সাথে ছাত্রী হলের বিষয়টিও আলোচনার তালিকায় আছে। তারা আবেদন করেছেন উপাচার্যের কাছে। উপাচার্য মহোদয়ই আমাদের আবেদনটি দেখতে বলেছেন।”
আর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘‘ছাত্রীদের দাবির বিষয়গুলো আমরা বিবেচনা করছি। আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সামনে একাধিক মিটিং আছে। সেখানে আলোচনা হবে।”