বিবাহিতরা বেশি স্বাস্থ্য সচেতন?
ভালোবাসা বা প্রেমের ‘হ্যাপি এন্ড’-এর নামই হয়ত বিয়ে৷ আর বিবাহের সময় প্রায় সকলেই ভাবেন সুশৃঙ্খল বিবাহিত জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যও বুঝি ভালো থাকবে৷ কিন্তু এ কথা কতটা সত্যি? বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল কী বলছে জেনে নিন৷
ডায়বেটিসের ঝুঁকি
বিবাহিত দম্পতিরা শুধু বিছানা আর খাবার টেবিলই ‘শেয়ার’ করেন না, সম্ভবত একে-অপরের অসুখ-বিসুখও ভাগাভাগি করেন তাঁরা৷ সমীক্ষার মাধ্যমে এই তথ্যটি খুঁজে বের করেছেন অ্যামেরিকার গবেষকরা৷ বিশেষ করে ডায়বেটিস টাইপ ২-এর ক্ষেত্রে এটা নাকি একেবারে খাঁটি কথা৷
একই খাবার পছন্দ
মোট ৬টি গবেষণা করা হয় প্রায় ৭৫ হাজার যুগলকে নিয়ে৷ ফলাফল – বিয়ের পর ডায়বেটিস টাইপ ২-এর ঝুঁকি শতকরা ২৬ ভাগ বেড়ে গেছে৷ এই অসুখ যে মানুষের জীবনযাত্রা ও খাওয়া-দাওয়ার ওপর নির্ভর করে, তা সকলেই কম-বেশি জানি৷ তাই স্বামী বা স্ত্রীর একজন যদি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যজনও একই খাবার খান৷ ফলে ডায়বেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷
বিয়ে কি ওজন বাড়ায়?
বার্লিনের মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট-এ ইউরোপের ৯টি দেশের মোট ৪৫৫৫ জন বিবাহিতদের নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছিল৷ এতে দেখা গেছে যে, বিবাহিতরা স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে নজর রাখা সত্ত্বেও তাঁদের ওজন বেড়ে গেছে৷ আসলে বিয়ের আগে সঙ্গী পাওয়া বা খোঁজার জন্য তাঁরা যেভাবে শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করতেন, বিয়ের পরে তা আর সেভাবে না করাই বাড়তি ওজনের কারণ!
ধূমপান
একাকী মানুষদের পক্ষে ধূমপান ছাড়া খুবই কঠিন একটা কাজ৷ তবে ধূমপায়ী যদি বিবাহিত হন, তাহলে অন্যজনের সহযোগিতায় ধূমপান ছাড়া অনেক সহজ হতে পারে৷ এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা৷ এই গবেষণা করা হয়েছিল ৩৭২২ জন বিবাহিতদের নিয়ে৷ এতে শতকরা ৪৮ ভাগ পুরুষ, তাঁদের স্ত্রীর সহযোগিতায় ধূমপান ছাড়তে সফল হন৷
বিয়ের আগে
অবিবাহিত অবস্থায় যাঁরা শরীরচর্চা, বাইরে হাঁটা-হাঁটি বা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতেন, তাঁরাই পরবর্তীতে সঙ্গির আগ্রহ না থাকার কারণে বিয়ের পর তা ছেড়ে দেন৷ ফলে তাঁদেরও ডায়বেটিস টাইপ ২-এর ঝুঁকি থাকে৷ জার্মানিতে এগারো হাজার দম্পতিকে নিয়ে করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
আনন্দের খবর
অন্যান্য কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্কের কারণে তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো বোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, একে-অপরকে মনের কথা খুলে বলতে পরার কারণে তাঁদের রক্তে স্ট্রেস হরমোন বা অবসাদ কমে যায়৷
আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
রক্তে স্ট্রেস হরমোন কমার ফলে শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়, যা কেটে যাওয়া ক্ষত সারতে সাহায্য করে এবং মনের অস্থিরতা, ভয় এবং আতঙ্ক কমিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে৷
নারীদের ক্ষেত্রে
গবেষণায় আরো জানা যায় যে, বিবাহিতরা হার্টের ‘বাইপাস’ অপারেশনের পর আরো বেশিদিন বেঁচে থাকেন৷ এটা বিশেষ করে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়৷ বলা বাহুল্য, এ কথা শুধুমাত্র সুখি দম্পতিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
পুরুষদের আয়ু বাড়ে
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিবাহিত পুরুষদের ক্ষেত্রে স্ত্রী পাশে থাকার কারণে তাঁরা অনেক নিশ্চিত বোধ করেন এবং তাঁদের বেঁচে থাকার আগ্রহ ও প্রেরণা জোগায়৷ তবে এখানেও এসে যায় সুখি দাম্পত্য জীবনের কথা৷ আর হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো স্বাস্থ্যের সাথে উন্নত জীবনযাত্রার মানের রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক৷