বিপন্ন কচ্ছপদের বাঁচাতে ওরা
৩০ অক্টোবর ২০১৯জার্মানির ম্যুন্সটার চিড়িয়াখানার সহযোগিতায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আঙ্কর সেন্টার ফর কনসার্ভেশন অফ বায়োডাইভার্সিটি বা এসিসিবি৷ তারা সফলভাবে হলুদ মাথাওয়ালা কচ্ছপের প্রজনন করে চলেছে৷
মাও তিয়া একজন বন সংরক্ষক৷ তিনি কাজ করেন এখানে৷ ‘‘যখন আমি প্রথম এই বড় বাচ্চাগুলোকে হতে দেখি, তখন খুব খুশি লাগছিল৷ আমি তাদের হাত পা নাড়াতে দেখি৷ আমি খুব খুশি ছিলাম যে আমাদের এখন কচ্ছপের বাচ্চা আছে,'' বলেন তিনি৷
বাচ্চা কচ্ছপগুলো ও মাও তিয়া কম্বোডিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে এসিসিবি নামের সংরক্ষণ সেন্টারে থাকেন৷ তাঁর দিন শুরু হয় প্রতিদিন সকাল সাতটায়৷ প্রতিদিন পুরো এলাকা হেঁটে হেঁটে তিনি দেখেন সব ঠিক আছে কি না৷
তিন মাস আগে মাটির নীচ থেকে ডিম ফুটে ৭৯টি হলুদ মাথার বাচ্চা কচ্ছপ বের হয়৷ এরপর তাদের ওজন করা হয়৷
টুলবক্সের ভেতর রংধনুর সব রঙের নেলপলিশ আছে হলুদ মাথার কচ্ছপগুলোর জন্য৷ রংয়ের চিহ্ন দিয়ে চিড়িয়াখানার সংরক্ষকরা মনে রাখেন কোনটিকে সংরক্ষণ সেন্টারের কোথায় রাখা হয়েছে৷
অন্য পশুপাখির হাত থেকে বাঁচাতে ছোটগুলোকে আলাদাভাবে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়৷ চারপাশে দেয়াল থাকলেও আকাশ থাকে খোলা৷ বাঁচিয়ে রাখার জন্য এদের এভাবে রাখা জরুরী৷
কিছুদিন আগে এই ধরনের কচ্ছপগুলো ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের চরম বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে৷
মিশায়েল মায়ারহফ এসিসিবির পরিচালক৷ পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে কাজ করতে পাঁচ বছর আগে তিনি জার্মানি থেকে কম্বোডিয়া আসেন৷ তিনি মূলত কাজ করছেন পাখি ও কচ্ছপ নিয়ে৷
‘‘ডাঙ্গারগুলোসহ পৃথিবীতে ৩৬০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে৷ যেটা এখনো কেউ টের পাচ্ছে না তা হলো, বিপন্ন প্রাণীর পরবর্তী তালিকা যখন প্রকাশ হবে তখন দেখা যাবে ৬০ ভাগ কচ্ছপ প্রজাতি নানা পর্যায়ের হুমকির মুখে৷ কম্বোডিয়া বলুন আর এশিয়াই বলুন, সারাবিশ্বেই এরা বিপন্ন,'' বলেন মায়ারহফ৷
বর্ধিত প্রজাতির এই কচ্ছপগুলো এখন আর স্থানীয় বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না৷ কম্বোডিয়ার ১৪টি কচ্ছপ প্রজাতির ১৩টিই বিপন্ন৷ এখনকার মানুষ কচ্ছপ খান এবং ঔষধে ব্যবহার করেন৷ এছাড়া অনেক জীবন্ত কচ্ছপ পোষেন৷
কম্বোডিয়ায় কচ্ছপ হলো সৌভাগ্যের প্রতীক৷ মন্দিরের কাছে নিয়ে ছেড়ে দিলে দীর্ঘ জীবন মেলে বলে অনেকের বিশ্বাস৷ তারা মনে করেন, পাখি খারাপ কর্মকে ধারণ করে৷ পশুপাখি ধরা ও ছেড়ে দেয়া একটা বিরাট ব্যবসা এখানে, যদিও তা অবৈধ৷
‘‘আমরা যেসব কচ্ছপ তা খাওয়ার জন্য নয়, এগুলো কেনা হয় মন্দির, লেক বা জঙ্গলে ছেড়ে দেবার জন্য,'' সোকোউন কাও নামের এক বিক্রেতা বলেন৷ ‘‘না হলে তো এগুলো রান্না করে খেয়ে ফেলবে৷ ছোটগুলো দিয়ে সুপ তৈরি করা হয়, আর বড় গুলোকে সিদ্ধ করা হয়৷''
মাও ও তার সঙ্গীরা প্রাণীগুলোর জন্য খাবার তৈরি করেন৷ ৬শ' ছোট-বড় কচ্ছপ এখানে সংরক্ষণ সেন্টারে৷ সবগুলোই বিপন্ন প্রজাতির৷
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এদের জন্ম ও বেড়ে তোলা কঠিন কাজ৷ তবে বর্ধিত প্রজাতির কচ্ছপগুলোর শুধু মুক্ত বাতাস ও খাবার দরকার৷ বাকিটা তারা নিজেরাই করতে পারে৷
মায়ারহফ বলেন, ‘‘সাড়ে পাঁচ বছর আগে যখন এখানে শুরু করেছিলাম, আমাদের ২০টি বর্ধিত প্রজাতির কচ্ছপ ছিল৷ আমাদের প্রজনন প্রকল্পের আওতায় এখন এসিসিবিতে ৩৩০টি এমন কচ্ছপ আছে৷ একেবারে মন্দ নয়৷''
এখন পর্যন্ত এসিসিবি তাদের কচ্ছপগুলোতে বুনো পরিবেশে ছাড়তে পারেনি৷ কারণ, তা নিরাপদ নয়৷ তাদের ভয়, মানুষ এগুলো ধরে নিয়ে যাবে৷
তাই মিশায়েল মায়ারহফ তার কচ্ছপগুলোকে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়ে আসতে চান৷
কারণ, এই বনে পুরো দক্ষিণ পূ্র্ব এশিয়ার সবশেষ ৫টি সায়ামিজ রোজউড গাছ আছে৷ একেকটা গাছের দাম ১ লাখ ইউরোর চেয়েও বেশি৷ সেগুলো রক্ষায় বনটিতে বনরক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ মায়ারহফের আশা, বনরক্ষকরা কচ্ছপদেরও সুরক্ষা দিতে পারবেন৷
তিনি বলেন, ‘‘যৌনকর্মে সক্ষম কচ্ছপগুলোকে আমরা বনে ছাড়তে চাই, যেগুলোর বয়স ৫ থেকে ৬ বছর৷ আগামী কয়েক বছর আমরা গবেষণা চালিয়ে হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজব৷ যেমন তাদের আবাসস্থল কেমন হওয়া উচিত৷ এরপর ২০ থেকে ৩০টি কচ্ছপ নিয়ে আমরা একটি পাইলট প্রকল্প চালু করব৷ কচ্ছপগুলোর বনে ছাড়ার আগে ট্রান্সমিটার বসিয়ে দেয়া হবে৷''
আপাতত কচ্ছপগুলোকে এসিসিবির চারদেয়ালেই থাকতে হবে, যতদিন না তাদের সংখ্যা বাড়ছে৷ সম্ভবত এই হলুদ মাথাওয়ালা কচ্ছপগুলোই প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পাবে৷ এরপর হয়তো তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম পুরোপুরি জঙ্গলেই জন্ম নেবে এবং বেড়ে উঠবে৷
লেয়া আলব্রেশট/জেডএ