বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা কেমন করে একাত্ম হবে নতুন দেশে
১২ জুলাই ২০১০কীভাবে একজন বিদেশি ছাত্র বিদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে? বিদেশি একটি ছাত্র বা ছাত্রীকে আপন করে নেওয়ার জন্য অতিথি দেশই বা কী করতে পারে ? জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছে এ কথাগুলো৷ বিশ্ববিদ্যালয়টি আয়োজন করেছে বিশেষ একটি সেমিনারের৷
আমি বিদেশে পড়তে চাই৷ নতুন একটি দেশে যাচ্ছি৷ সে দেশের মানুষের প্রতি আমার আচার-আচরণ কেমন হওয়া উচিত ? আমার সঙ্গেই বা তারা কীভাবে কথা বলবে ? কোন ধরণের প্রশ্ন তারা আমাকে করতে পারে ? ঠিক এধরণের প্রশ্নের যথার্থ উত্তর খুঁজে পেতে জার্মানির ভুর্ৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে৷ সেমিনারের নাম দেয়া হয়েছে ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পিটেন্স'৷ গত দু'বছর ধরে এই প্রকল্পটি চলছে৷ এই প্রকল্পে কাজ করছে ভুর্ৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদ৷ এই অনুষদগুলোর অধীনে পঞ্চাশটি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে পড়াশোনা করা যায়৷ ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য শিখতে বিভিন্ন ট্রেনিং পর্যন্ত নিচ্ছে৷
ইয়োহানা জানাল, ‘‘আরেকবার জানাবেন কি, এখানে কী করা হচ্ছে ? '
কিমের উত্তর,‘‘হুমমমমমম, আমি খেলাধুলা নিয়ে পড়াশোনা করছি, এর সঙ্গে রয়েছে ইংরেজি আর শিক্ষা৷ আর আপনি ? মনোবিজ্ঞান চতুর্থ সেমেস্টার৷ পরীক্ষা কি এর মধ্যে হয়ে গেছে ?'
ইয়োহানা বলল, ‘‘না৷ পরীক্ষা এখনো হয়নি৷ পরীক্ষা এখনো সামনে৷''
কিমের সাধাসিধে উত্তর,‘‘হমমমমমম....''
কিম এবং ইয়োহানা ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পিটেন্স' সেমিনারে অংশগ্রহণ করছে৷ তাদের কথাবার্তা থেকে বিশেষ কিছু বোঝা গেল কি ? দু'জন ছাত্রী পড়াশোনার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে৷ তারপরেও কিন্তু কিছু একটা লক্ষ্য করা গেছে৷
কিম নিজেই তা স্বীকার করল, ‘‘আমার কাজ ছিল নিজের পরিচয় দেওয়া৷ আর প্রতিটি উত্তরের আগেই আমি ‘হু, হাঁ' করেছি৷ যখন এসব দিয়ে উত্তর দেওয়া হয় তখন প্রতিপক্ষকে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়না৷''
তবে ইয়োহানা বলল অন্য কিছু, ‘‘প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে আমি ‘আপনি' করে কথা বলছি৷ এটা আমার জন্য বেশ কঠিন৷ আমার মনে হয় আপনি করে বলায়, দূরত্ব বাড়ে৷ আমি এক বছর আর্জেন্টিনায় ছিলাম৷ সেখানে একজন ষাট বছরের বুড়ো সম্পূর্ণ অপরিচত একজন ছাত্রীকে তুমি করে বলছে আর ছাত্রীটিও বুড়ো ভদ্রলোককে তুমি সম্বোধন করছে৷''
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রীতি-নীতি
একেক দেশে, একেক নিয়ম, রীতি৷ এসবই শেখানো হচ্ছে ‘গ্লোবাল সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল কম্পেটেন্স'-এর সেমিনারে৷ এই সেমিনারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একে অপরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা, কথা বলা৷ সবমিলে প্রায় ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এই কোর্সে অংশগ্রহণ করছে৷ কীভাবে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মিশতে হবে তা তারা শিখছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে ১৮টি জুতোর খালি বাক্স৷ বাক্সে লেখা রয়েছে নানা ধরণের শব্দ৷ বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে অপছন্দের জিনিসগুলো৷ একটি বাক্সের ওপর লেখা রয়েছে ‘ভোদকা'৷ এর অর্থ রাশিয়া বা রাশিয়ার এমন কিছু যা অপছন্দের৷ একটি বাক্সে লেখা ‘মুখ রক্ষা করা' এর অর্থ চীন৷ চীনে কাউকে অপমান করা বা ছোট করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বাক্স দিয়ে এই খেলার অর্থ হল অপছন্দের জিনিসগুলো বাক্সবন্দি করা, এগুলোকে কোন অবস্থাতেই সঙ্গে নেওয়া যাবে না৷ কথাগুলো জানান, মারিয়া লুইসা মারিসকাল মেলগার৷
মেলগার জানান, ‘‘যে কোন ধরণের বদ্ধমূল ধারণা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বেরিয়ে আসতে হবে৷ কোন বদ্ধমূল ধারণা থাকলে স্বাধীনভাবে কোন কিছু ভাবাও যায় না৷ সহজ কথা সবাইকে অত্যন্ত সহনশীল হতে হবে, অন্য দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য গ্রহণ করতে শিখতে হবে কিন্তু সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে নয়৷''
আইনজীবি মারিসকাল মেলগার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পার্থক্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জেনেছেন৷ পাঁচ বছর আগে যখন তিনি জার্মানিতে আসেন তখন থেকেই৷ তিনি জানালেন,‘‘আমার পরিবারের বেশ কিছু সদস্য বলিভিয়ার নাগরিক আর বেশ কিছু ব্রাজিলের নাগরিক৷ এখন তারা অনেকেই আফ্রিকায় বসবাস করছে৷ আমার ভাই বোনেরা ইংল্যান্ডে৷ আমি জার্মানিতে৷ আমার মনে হয়, একেক দেশে থাকা, তাদের নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি মেনে চলাই আমাকে সাহায্য করেছে এধরণের একটি কোর্স পরিচালনা করতে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক