বিদায় বিবিয়ানা
জার্মানির শীর্ষ লিগ বুন্ডেসলিগার প্রথম নারী রেফারি বিবিয়ানা শ্টাইনহাউস অবশেষে সুপার কাপে বায়ার্ন মিউনিখ বনাম বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ম্যাচ পরিচালনা করে ইতি টানলেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের৷
পুলিশ এবং রেফারি
জার্মান পুলিশের চিফ ইন্সপেক্টর বিবিয়ানা ৷ পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং দায়িত্ব তাকে ফুটবল মাঠেও সহায়তা করেছে বলে মনে করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে বিবিয়ানা বলেন, ‘‘আমরা আইন তৈরি করি না, কিন্তু আমরা আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করি এবং মানুষকে তা মানতে বাধ্য করি৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশ বা রেফারিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ একসময় মানুষও বুঝে যায়, কার সিদ্ধান্তে চলতে হবে৷’’
বাবার মেয়ে বিবিয়ানা
বিবিয়ানা শ্টাইনহাউসের বাবাও একজন ফুটবল রেফারি ছিলেন৷ বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই ১৫ বছর বয়স থেকে পেশাদারি প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেন বিবিয়ানা৷ রেফারিংয়ের আগে নিজের শহর বাড লয়টারব্যার্গের হয়ে খেলেছেনও তিনি৷ পরে সেই দলের বিভিন্ন ম্যাচে রেফারির ভূমিকা পালন করেন৷
দ্রুত উত্থান
১৯৯৯ সালে নারী বুন্ডেসলিগা, ২০০১ সালে রেগিওনলিগা এবং নারীদের বুন্ডেসলিগাতেও দায়িত্ব পালন করেন বিবিয়ানা৷ ২০০৩ সালে নারী বুন্ডেসলিগার ফাইনালের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৭ সালে দায়িত্ব পান পুরুষদের সেকেন্ড ডিভিশন বুন্ডেসলিগায় রেফারিংয়ের৷ এরপর অবশ্য শীর্ষ লিগের রেফারির দায়িত্ব পেতে তাকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়৷
আন্তর্জাতিক দায়িত্ব
তার মেধার স্বীকৃতি মিলেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও৷ ২০০৮ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ নারী বিশ্বকাপের, ২০০৯ সালে উয়েফা নারী ইউরো এবং ২০১০ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ নারী বিশ্বকাপে রেফারির দায়িত্ব পালন করেন বিবিয়ানা৷ ২০১১ সালে নারী বিশ্বকাপে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ফাইনালে রেফারি ছিলেন তিনি৷
বুন্ডেসলিগায় ইতিহাস
একসময় জার্মানির পুরুষদের শীর্ষ ফুটবল লিগে রেফারি হবেন একজন নারী এ কথা ভাবাই যেতো না৷ ইতিহাস পালটে দিলেন বিবিয়ানা৷ যতদিনে বুন্ডেসলিগা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ততদিনে নারী বিশ্বকাপসহ নারীদের নানা বড় চ্যাম্পিয়নশিপে রেফারিং করে ফেলেছেন৷ ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ব্রেমেন ও হ্যার্থার মধ্যকার ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করে ইতিহাসের অংশ হন বিবিয়ানা৷ সে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়৷
‘ভুল’ শিরোনাম!
নারী হয়েও পুরুষের ফুটবলে রেফারির দায়িত্ব পাওয়ায় বিবিয়ানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যম৷ কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে কখনোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি বিবিয়ানা৷ তিনি মনে করেন, রেফারি নয়, মনোযোগ থাকা উচিত খেলার দিকে৷ ২০১৭ সালে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘মাঠে কে কিভাবে পারফর্ম করছে সেটাই মূল বিষয়৷ কার লিঙ্গ কী, কার গায়ের বা চুলের রং কেমন তা ফুটবলে আলোচনার বিষয় নয়৷’’
বিতর্ক এবং এক পুরুষের সাজা
সমাজের রক্ষণশীল অংশের অনেকেই মাঠে বিবিয়ানাকে অনেকটা সময় সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি৷ ২০১৫ সালের এক ম্যাচে দুটি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার সময় ’পুরুষদের ম্যাচে নারীর কোনো স্থান নেই’ বলে মন্তব্য করেন ফরচুনা ড্যুসেলডর্ফের মিডফিল্ডার কেরেম ডেমিরবে৷ পরে অবশ্য শাস্তি হিসেবে কেরেমকে নারীদের একটি ফুটবল ম্যাচের দায়িত্ব পালন করতে হয়৷
ম্যাচ সম্প্রচারে ইরানের অস্বীকৃতি
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারীর রেফারিংয়ে ম্যাচ সম্প্রচার করতে অস্বীকৃতি জানায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আইআরআইবি৷ এর আগে অবশ্য বিবিয়ানার রেফারিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচ তারা সম্প্রচার করেছিল৷ কিন্তু সেটিতেও মূল ভিডিওতে যখন বিবিয়ানাকে দেখানো হচ্ছিল ইরানের টিভি দেখাচ্ছিলো মাঠের দর্শকদের৷