বিতর্কে ‘বড়লোকের বিটি’
১ এপ্রিল ২০২০চুরি হয়ে যায় গান৷ অর্থ তো নয়ই, সামান্য সম্মানটুকুও কেউ দেয় না৷ বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন রতন কাহার। ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানের স্রষ্টা আপাতত সংবাদ শিরোনামে৷
পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত প্রান্তে হতদরিদ্র অবস্থায় জীবননির্বাহ করছেন রতন কাহার৷ ১৯৭০ সালে বড়লোকের বিটি লো গানটি লিখেছিলেন তিনি৷ তবে ১৯৭৬ সালে গানটি জনপ্রিয় হয় স্বপ্না চক্রবর্তীর গলায়। সম্প্রতি বাদশাহ নামের এক গায়ক সেই গানটিই ব্যবহার করেছেন তাঁর নতুন মিউজিক ভিডিওতে৷ বাদশাহ অবশ্য মূল গানের দুইটি লাইন কেবল ব্যবহার করেছেন৷ বাকি গানটি তাঁর নিজের রচনা৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, আদৌ এ ভাবে বাদশাহ গানটি ব্যবহার করতে পারেন কি না? কারণ, নিজের মিউজিক ভিডিওতে বাদশাহ কোথাও রতন কাহারকে প্রাপ্য সম্মান জানাননি৷ অর্থ সাহায্যের তো প্রশ্নই ওঠে না৷
এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে রতনবাবুকে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এর আগেও বারবার তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই এসে আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গেয়েছেন। কিন্তু তারা টাকাও দেননি, সম্মানও দেননি।’’ কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেলেন শিল্পী৷ তার বক্তব্য, এ সব নিয়ে আইনি লড়াই লড়ার মতোও অর্থ নেই তার। প্রতিদিন ভাতের ব্যবস্থা করতেই তার কালঘাম ছুটে যায়৷ বস্তুত, রতনবাবুর আক্ষেপ, এই প্রথম নয়, ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী যখন এই গান গেয়েছিলেন, তখনও তাকে প্রাপ্য সম্মান জানানো হয়নি৷ শুধু এই গানটিই নয়, তার অন্য গানও কলকাতার স্বনামধন্য শিল্পীরা কার্যত ‘চুরি’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রতনবাবু৷
বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠন বাংলা পক্ষ জানিয়েছে, তারা রতনবাবুর হয়ে আইনি লড়াই লড়বেন৷ বাংলা পক্ষের অন্যতম সংগঠক গর্গ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাদশাহের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। রতনবাবু যাতে তার ন্যায্য সম্মান পান, আমরা তার ব্যবস্থা করব৷’’ কিন্তু আইনের সাহায্যে কি সুবিচার পাবেন রতনবাবু? কপিরাইট এবং সাংস্কৃতিক স্বত্ত্ব নিয়ে যারা কাজ করেন, তেমন আইনজীবীদের বক্তব্য, আদালতে মামলা হলে তা রতনবাবুর পক্ষে যাওয়ার কথা নয়৷ কারণ, রতনবাবুর লেখা একটি জনপ্রিয় গানের মাত্র দু'টি লাইন ব্যবহার করেছেন বাদশাহ৷ পুরো গানটি অথবা একটি গোটা স্তবক ব্যবহার করা হয়নি৷ ফলে এর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া মুশকিল৷ বহু সময়েই এ ধরনের জনপ্রিয় লাইন নানা গানে ব্যবহার হয়েছে৷ গানের শুরুতে, মাঝে অথবা শেষে এ ধরনের জনপ্রিয় গানের সুর অথবা কথা ব্যবহারের প্রবণতাও নতুন নয়৷
একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাদশাহ অবশ্য জানিয়েছেন, যে রেকর্ডে তিনি এই গানটি শুনেছেন, সেখানে রতনবাবুর নাম ছিল না৷ তাই তিনি জানতেন না গানটি কার৷ রতনবাবুকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন৷
সকলেই একটি বিষয়ে এক মত৷ রতনবাবুর মতো শিল্পী যে ভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না৷ ফলে তাঁকে সাহায্য করার জন্য এবং তাঁর সৃষ্টি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু গোষ্ঠী সে চেষ্টা শুরুও করে দিয়েছে৷