1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিচারহীনতাই বাড়াচ্ছে যৌন হয়রানি'

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গাইবান্ধার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ক্লাসের মধ্যে যৌন হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক আয়নাল হক৷ এতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হলেও, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ এমনকি তাকে গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/1I4Fg
Symbolbild Kindesmisshandlung Bestrafung
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনাই নয়, দেশের প্রতিটি স্কুলের অবস্থাও তথৈবচ৷ জানা যায়, ঘটনার পর প্রথম কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন অভিযুক্ত শিক্ষক৷ তারপর আবারো ফিরে আসেন, যোগ দেন চাকরিতে৷ তিনিই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, তাই হুমকি-ধামকি দিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে দেন৷ স্থানীয় প্রভাবশালীরাও অভিযুক্তের পক্ষ নেন৷ তাই বিপদে পড়ে ভুক্তভোগী পরিবার৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সাদেকা হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন নতুন কিছু নয়৷ আমরা এখনও যেসব পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছি বা যেসব পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রীকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না৷ ফলে তাদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে৷ সেখানে বলা আছে যে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি থাকতে হবে৷ কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেটি নেই, প্রাইমারি স্কুল তো দূরের কথা৷ জেলা প্রশাসকরা এ নিয়ে একটি কমিটি করতে পারেন৷ তা-ও করেন না৷''

সাদেকা হালিম বলেন, ‘‘কোনো ঘটনা মিডিয়াতে আসলে তার বিচার হয়৷ কিন্তু ক'টি ঘটনাই বা মিডিয়াতে আসে? ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না৷ এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই যৌন নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হতো৷''

গত ২২শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর অদূরে খালিশপুর আলিম মডেল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির এক ছাত্রী মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রউফের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়৷ কিন্তু সেসময় শিক্ষক উপস্থিত না থাকায় সে যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান তাকে কৌশলে মাদ্রাসা সংলগ্ন নিজের বাসায় ডেকে নেন এবং এক পর্যায়ে ধর্ষণ করেন৷ বিষয়টি জানাজানি হলে শফিকুর রহমানের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়৷ কিন্তু পুলিশ এখনো তাকে গ্রেপ্তার করেনি৷ আর সেই সুযোগে এখন তিনি লাপাত্তা৷

নারায়ণগঞ্জ বন্দরে গত মে মাসে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আরেক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়৷ ঐ সময় এলাকাবাসী ধর্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ শাহ আলমকে আটক করে পুলিশকে সোপর্দ করেন৷ ঘটনাটি ঘটে আদর্শ কিন্ডারগার্টেন মাদ্রসার শিক্ষকের কক্ষে৷ এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন৷ মামলায় কিছু দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান ধর্ষক শিক্ষক৷ এখন তিনি উল্টে ছাত্রীর পরিবারকেই হুমকি দিচ্ছেন৷ আর শাহ আলমের পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন এলাকার প্রভাবশালীরা৷

সাদেকা হালিম

গেল বছরের জুলাই মাসে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার শৌলখালীর সুহাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরবন্ধু হালদার হাতে ধর্ষিত হয়৷ কৌশলে ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছিলেন শিক্ষক ৷ ভয়ে ছাত্রীটি বিষয়টা প্রথমে কাউকে বলতে পারেনি৷ পরে যখন তার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তখন সে তার মাকে বিষয়টি জানায়৷ বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক পালিয়ে যান৷ এখনো তাকে ধরা যায়নি৷ উল্টে ফোনে ধর্ষিত ছাত্রীর পরিবারকে আজও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন ঐ শিক্ষক৷

বাংলাদেশে এ ধরনের অসংখ্য ছাত্রী-ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে৷ কিন্তু কোনো ঘটনারই সঠিক বিচার হচ্ছে না৷ মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা আরো খারাপ৷ সেখানে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও খবর বাইরে আসে না৷

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘‘মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা আসলেই খারাপ৷ বাচ্চাদের এখানে দিয়ে যাওয়ার পর অভিভাবকরা তো খোঁজই নেন না৷ তাছাড়া মাদ্রাসাগুলো এমনভাবে আবদ্ধ করে রাখা হয় যে, সেখানে সাধারণ মানুষ ঢুকতেই পারে না৷ ফলে সেখানে কী ঘটে – তা কিন্তু বাইরের লোক জানতে পারে না৷ যে দু-একটি ঘটনা বাইরে আসে, তা একেবারেই বাধ্য হয়ে৷ না হলে সেগুলোও জানা যেত না৷ তাই আমার মনে হয়, মাদ্রাসাগুলোর দিকে সরকারের বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত৷''

স্কুল-কলেজে যৌন হয়রানি বন্ধ করা যায় কীভাবে? জানান আমাদের, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান