বাড়ির দেওয়ালেই সৌরশক্তি?
১১ জুলাই ২০১৬৩০০ কোটি বছর আগে থেকেই সবুজ গাছপালা ক্লোরোফিলের মাধ্যমে সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহে সাহায্য করে আসছে৷ সবুজ পাতা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সেই আলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে৷ এটাই পৃথিবীতে প্রাণের মূল ভিত্তি৷ পরিবেশ দূষণ ছাড়াই শক্তি উৎপাদন করার অভিনব এই প্রক্রিয়া৷
কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জ্বালানি উৎপাদনের এই প্রক্রিয়া নকল করার চেষ্টা করছেন৷ স্থপতি, শিল্পী, ন্যানো প্রযুক্তি বিজ্ঞানী ও ডিজাইনারদের এক টিম এমন এক উপকরণ তৈরি করছেন, যা একদিকে সোলার সেল, অন্যদিকে সেটি আবার সূর্যের আলো বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে পারে৷
প্রথমেই তৈরি হচ্ছে কন্ডাকটিভ সিমেন্ট৷ গ্রাফাইট যোগ করে গবেষকরা এই কন্ডাকটিভিটি সম্ভব করছেন৷ সিমেন্ট শক্ত হয়ে চূড়ান্ত রূপ নিলে পজিটিভ-নেগেটিভ পোল হিসেবে কাজ করে এবং ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে৷
স্থপতি টর্স্টেন ক্লোস্টার ও শিল্পী হাইকে ক্লুসমান-এর মাথায় সিমেন্ট দিয়ে সৌরশক্তি উৎপাদনের এই আইডিয়া আসে৷ কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. হাইকে ক্লুসমান বলেন, ‘‘দেখলে মনে হবে সাধারণ সিমেন্ট৷ কিন্তু এর বিশেষত্ব হলো, এটি টাচ-সেনসিটিভ৷ সিমেন্ট কন্ডাকটিভ করে তোলায় এমনটা ঘটছে৷ এই কন্ডাকটিভ সিমেন্ট আমাদের সৌর-সিমেন্টের ভিত্তি৷''
সিমেন্ট কন্ডাকটিভ করে তুলতে গবেষকরা তার উপর একাধিক রংয়ের প্রলেপ স্প্রে অথবা প্রিন্ট করেন৷ ফলে এক ‘ডাই সেন্সিটাইজড' সোলার সেল সৃষ্টি হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে৷ অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলে৷ তবে কয়েক মাইক্রোমিটার পাতলা রংয়ের স্তরগুলির নির্দিষ্ট বিন্যাস এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷ টর্স্টেন ক্লোস্টার বলেন, ‘‘রংয়ের স্তরগুলি ঠিকমতো ক্রমানুসারে সাজালে শেষ পর্যন্ত ফটোভল্টায়িক সেল-এর মতো কাজ করবে৷ এগুলির মধ্যে এমন একটি স্তরে রংয়ের পিগমেন্ট রয়েছে৷ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে এবং বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়৷
‘ডাই সেন্সিটাইজড' সোলার সেল আরও উন্নত করে তুলতে ল্যাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিমাপ চালানো হয়৷ একটি সোলার সেল মাত্র কয়েক'শো মিলিভোল্ট ভোল্টেজ সৃষ্টি করে৷ সেই সোলার সেল হাত দিয়ে ঢেকে দিলে পরিমাপের গ্রাফের মধ্যে ভোল্টেজ ড্রপ স্পষ্ট দেখা যায়৷ সোলার সেলের উপর আলো পড়লেই ভোল্টেজ আবার বেড়ে যায়৷
সেল-গুলির কার্যকারিতা এই মুহূর্তে ২ শতাংশের মতো৷ শুনলে বেশি মনে না হলেও এ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অবশ্যই অর্থ রয়েছে৷ কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. হাইকে ক্লুসমান বলেন, ‘‘সোলার-সিমেন্ট এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ, যে অতি সহজে এটি তৈরি করা যায়৷ তাছাড়া এটি অতি পরিবেশ-বান্ধব এবং বড় জায়গার উপর এটি প্রয়োগ করা যায়৷ ভবিষ্যতের দিকে তাকালে অবশ্যই কল্পনা করা যায়, যে শহরের সব ফ্ল্যাট সারফেস বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে৷''
ঘরবাড়ির দেওয়ালের উপর যত বেশি রং স্প্রে অথবা প্রিন্ট করা যায়, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ এর জন্য একক সেলগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে৷ আদর্শ অবস্থায় প্রতি বর্গমিটারে ২০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ টর্স্টেন ক্লোস্টার বলেন, ‘‘একটি সেল যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না, সেটি কনফিগার করতে হয়৷ একাধিক সেল দিয়ে একটি মডিউল তৈরি হয়৷ এখানে তার একটা উদাহরণ দেখা যাচ্ছে৷ এখানে ৬টি ফিল্ডে ৬টি সেল রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে একটি তার দিয়ে সেগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই রো-তে সমান্তরালভাবে সেগুলি কনফিগার করা হয়েছে৷ তারের শেষ প্রান্তে একটি বাল্ব লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে৷''
সিমেন্টের মধ্যে সেলগুলির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রংয়ের স্তরের মধ্যে লুকানো রয়েছে৷ গবেষকরা একটি দেওয়াল বেয়ে ওঠা রোবট কাজে লাগিয়ে দেওয়ালে রং স্প্রে করাচ্ছেন৷ বছর পাঁচেকের মধ্যে বড় আকারে এমন রংয়ের সেল তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ নতুন অথবা পুরানো বাড়িঘরে তা প্রয়োগ করা যাবে৷