বাজার অগ্নিমূল্য়, মিড ডে মিলে শুধুই খিচুড়ি
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে স্কুলের মিড ডে মিলে মিলছে না ডিম। বরাদ্দ না বাড়লে মুশকিল, বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
দামের ছ্যাঁকা
বর্ষা পেরিয়ে শীত, কিন্তু বাজারের উত্তাপ কমছে না। শীতের সবজিরও চড়া দাম। ডিমের ক্রেট ২০০ টাকা পেরিয়েছে।
মিড ডে মিলে কোপ
এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুলের মিড ডে মিলে মিলছে না ডিম। অধিকাংশ দিনই খিচুড়ি খাওয়াতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বরাদ্দ না বাড়ালে সবজি-ডিম কেনাই মুশকিল হয়ে পড়ছে।
বরাদ্দের অধিক খরচ
স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণ-সহ যাবতীয় কাজ মিটিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিলের পাতে ডিম দিতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, মাসে চারটি করে ডিম দেওয়ার কথা। অর্থাৎ সপ্তাহে একটি। সেই নিয়ম পালন করতে স্কুলের অন্য কাজের জন্য বরাদ্দ টাকায় হাত দিতে হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলকে। তাতেও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।
ডিম নিয়ে আরো সমস্যা
পশ্চিমবঙ্গে ডিমের উৎপাদন কম। অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলি থেকে বিপুল পরিমাণ ডিম আসে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে ডিম উৎপাদিত হলেও স্থানীয় চাহিদা মেটাতেই তা শেষ হয়ে যায়। ফলে কলকাতার কপালে জোটে ছিটে ফোঁটা। সেইসঙ্গে চাল,ডাল, সবজি, জ্বালানির খরচ বেড়েছে। তাই একাধিক খাবার নয়, খিচুড়ি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।
মাছ-মাংস কল্পনাতীত
মিড ডে মিলের খাবারে মাছ-মাংস দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না বহু স্কুলে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গত কয়েকমাসে মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে লাফিয়ে কিন্তু মিড ডে মিলের বরাদ্দা বাড়ায়নি সরকার। ফলে সমস্যা আরো বেড়েছে।
সরকারের টাস্ক ফোর্স
পশ্চিমবঙ্গে কাঁচা বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল সরকার। কিন্তু তাতেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। তার উপর জ্বালানির দামও বেড়েছে গত কয়েকমাসে।
অর্থনৈতিক সহায়তা
ডিম ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পোলট্রির মুরগি প্রতিপালনের খরচ বেড়েছে। গোটা দেশেই তাই পোলট্রি মুরগি প্রতিপালন করে ডিমের উৎপাদন কমেছে। পোলট্রি ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত। সরকার আর্থিক সহায়তা না করলে অনেককেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে দাবি করা হচ্ছে।
দাম কমেছে
শিয়ালদহের ডিমপট্টিতে এখন ডিমের দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা। খোলা বাজারে সেই ডিমের দাম হচ্ছে ৭ টাকায বা তারও বেশি।
মিড ডে মিলের কর্মী
নন টিচিং স্টাফ বানোয়ার মেহরা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ডিমের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি জ্বালানির দামও বেড়েছে। তাই সপ্তাহে একটি করে ডিম দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ দিনই খিচুড়ি দিতে হচ্ছে। খিচুড়িতে ডাল থাকে, ফলে কিছুটা হলেও প্রোটিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মাছ-মাংস বহুদিন দেওয়া যায়নি।''
শিক্ষকের কথা
রসায়নের শিক্ষক সুশান্ত কুমার পোড়ে জানিয়েছেন, বাজারে সমস্ত জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই পুষ্টিকর খাবার বিদ্যালয়ের পক্ষে সরবরাহ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলুর দাম ৪০ টাকা, ডিমের দাম ছয় থেকে সাত। এই পরিস্থিতিতে মিড ডে মিলের জন্য যে বরাদ্দ, তাতে চলে না। সরকার এবং সর্বশিক্ষা মিশনকে এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা এবং উদ্যোগ নিতে হবে।
অভিভাবকদের অভিযোগ
কলকাতা সংলগ্ন একটি স্কুলে এক অভিভাবক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মিড ডে মিল প্রকল্প চালু হওয়ার পর বহু ছাত্রছাত্রীই স্কুলমুখী হয়েছিল। দিনে একবেলা খাবার অন্তত তারা পেতো। মিড ডে মিলের খাবার এখন এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, সে খাবার ছাত্রছাত্রীরা খেতে পারছে না। এর ফলে আবার স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে।