বাংলাদেশে আরেক নারীর ইতিহাস সৃষ্টি
২১ নভেম্বর ২০১৪
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়ে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের পাশাপাশি, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীর অবদান এবং দৈনন্দিন জীবনে নারীদের নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রথমবারের মতো জিডি (পাইলট) ব্রাঞ্চে নারী বৈমানিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে৷ বেসামরিক ক্ষেত্রে নারী বৈমানিক থাকলেও সামরিক জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বৈমানিক পেশায় বাংলাদেশে এই প্রথম নারী বৈমানিক নিয়োগের মাইলফলক স্থাপন করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী৷
চলতি বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ স্কোয়াড্রনে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন দু'জন নারী বৈমানিক ফ্লাইং অফিসার নাইমা হক ও পাইলট অফিসার তামান্না-ই-লূত্ফী৷ বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য নির্বাচিত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা বর্তমানে ১৮ স্কোয়াড্রনের অধীনে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়োজিত আছেন৷
কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের প্রথম ধাপ হিসেবে বৃহস্পতিবার তামান্না-ই-লূত্ফী বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে প্রথম সফলভাবে একক উড্ডয়নে সক্ষমতা অর্জন করেন৷ নারী অগ্রযাত্রার এই অভিযান তাঁদের সাফল্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তথা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য এক নতুন উত্সাহ ও উদ্দীপনার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে বলে জানায় আইএসপিআর৷
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের একদিন আগে নারী সামরিক বৈমানিকের এই ঐতিহাসিক সাফল্য দিবসকে গৌরবের নতুন মাত্রা দিয়েছে৷
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নারী বৈমানিক বেসামরিক বিমান চালানোর অনুমতি পান৷ ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পান সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা৷
১৯৮৪ সালে বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বর্তমান শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে একটি ফকার বিমান অবতরণ করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট কানিজসহ ওই বিমানের ৪৫ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু৷
এছাড়া এই বছরেই আরো ১৩ নারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন৷ গত ২০শে সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ১৩ জন নারী নাবিক কাজ শুরু করেন৷ তাঁরা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি পান৷ ইতিহাস গড়া এ দেশের এই নারী মেরিন ক্যাডেটরা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজে যোগ দিয়েছেন৷ আর বাংলাদেশের নারীরা এখন ট্রেনও চালাচ্ছেন৷ পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সব ধরণের পেশায় রয়েছে তাঁদের অংশগ্রহণ৷ তাঁরা পর্বত আরোহণ থেকে শুরু করে ডুবুরি সবখানেই সফল৷
নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিকের এই সফল উড্ডয়ন বাংলাদেশে নারীদের এগিয়ে যাওয়ায় নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করল, যা নারীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে৷ তিনি প্রমাণ করলেন যে, নারীরা মেধা ও যোগ্যতায় কারু থেকে পিছিয়ে নেই৷ তাঁরা সুযোগ পেলে তাঁদের মেধা এবং কাজের প্রমাণ রাখতে সক্ষম৷ তবে তিনি বলেন, নারীদের আরো অনেক পথ পেরোতে হবে৷ আর কর্মক্ষেত্র হতে হবে নারী বান্ধব৷