বিদ্যুৎখাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ জার্মানির
২১ জুলাই ২০১৮কারণ, তারা পটুয়াখালির পায়রায় আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সাত বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশী টাকায় ৭০ হাজার কোটি টাকা৷ দুইদিন আগে জার্মান কোম্পানি ভেরিডোজকে ই-পাসপোর্টের কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়৷
গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ সফররত জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিয়েলস আনেন বৈঠক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে৷ নিয়েলস বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, যাতে বাংলাদেশে জার্মান কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি সুযোগ দেয়া হয়৷ এর উত্তরে মাহমুদ আলী তাকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন৷ দুই মন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷
পটুয়াখালির পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হাব করছে বাংলাদেশ সরকার৷ সেখানে পৃথক পৃথক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে৷ এর মধ্যে সিমেন্সের সহায়তায় তৈরি হবে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ গত বছরের ৪ নভেম্বর ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম এবং সিমেন্স দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুনীল মাথুর৷
পিডিবি'র চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমওইউ হওয়ার পর সমীক্ষার কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে৷ এখন পর্যন্ত সবকিছু ইতিবাচক ভাবেই এগুচ্ছে৷ জার্মান কোম্পানি সিমেন্স শুধু এখানে বিনিয়োগই করছে না, তাদের যন্ত্রপাতি আমরা সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করছি৷ তারা অত্যন্ত ভালো মানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে৷ এর মধ্যে আমরা সৈয়দপুরের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আহবান করেছিলাম৷ সেখানে দরপত্রে যারা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয়েছে তারা সবাই সিমেন্সের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে বলে উল্লেখ করেছে৷''
এখন পর্যন্ত দেশে নির্মিতব্য বা নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সবগুলোই ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার৷ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট৷ পায়রায় ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি নির্মিত হলে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মর্যাদা পাবে৷ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে৷
এমওইউতে উল্লেখ করা হয়, পটুয়াখালির ধানখালি এলাকায় ১০০ একর জমির উপর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে৷ প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ঋণ হিসেবে জার্মানি দিবে ২৪০ কোটি ডলার, যা মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ৷
যৌথ মালিকানার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অর্ধেক মালিকানা বাংলাদেশের এবং বাকি অর্ধেক জার্মান কোম্পানি সিমেন্সের৷ প্রকল্পের মূলধনী বিনিয়োগ ৪০ কোটি ডলারের অর্ধেক ২০ কোটি ডলার সংস্থান করবে এনডব্লিউপিজিসিএল৷
তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে৷ প্রতিটি পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার পৃথক ইউনিট নির্মিত হবে৷ প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২০ সালের জুনে, দ্বিতীয় পর্যায়ের একই বছরের ডিসেম্বরে এবং তৃতীয় পর্যায়ের ২০২১ সালের ডিসেম্বরে৷ পিজিসিবির বাস্তবায়নাধীন ৪০০ কেভি'র একটি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ওই বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে৷
এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের অর্থায়ন ও ঋণ সহায়তা করবে জার্মানি৷ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো ইউরোপীয় দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এটি৷''
একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিনৎস বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটেছে৷ এখন তারা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে৷ বাংলাদেশের এই উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন৷ সেই প্রযুক্তি হতে হবে অত্যাধুনিক এবং টেকসই৷ সস্তা প্রযুক্তি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ জার্মানি আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে৷''জানা গেছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করার পরই কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে৷ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে গত বছরের আগস্টে একটি আগ্রহপত্র দেয় জার্মান দূতাবাস৷ সরকারের কাছে দেয়া আগ্রহপত্রটি যাচাই করে এনডব্লিউপিজিসিএল'র মাধ্যমে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ এর আগে দেশের টেলিফোন শিল্পে বিনিয়োগ করেছিল জার্মান কোম্পানিটি৷