বাঁয়ে মোড়লেন শুলৎস, এসপিডি-র পালে হাওয়া
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭জনপ্রিয় ‘বিল্ড আম জোনটাগ' পত্রিকা গত সপ্তাহান্তে (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) ঘোষণা করে যে, তাদের ফরমায়েশ করা একটি জরিপে এসপিডি দল সিডিইউ-সিএসইউ দলকে ছাড়িয়ে গেছে – যা কিনা গত দশ বছরে, অর্থাৎ ২০০৬ সাল যাবৎ কখনো ঘটেনি৷
এমনিড সংস্থা ১,৮৮৫ জন ভোটারের মত নিয়ে দেখে যে, এসপিডি পেয়েছে ৩৩ শতাংশ ভোট – গত সপ্তাহের চেয়ে এক শতাংশ বেশি; সে তুলনায় সিডিইউ-সিএসইউ দল এক শতাংশ জনসমর্থন হারিয়ে ৩২ শতাংশে নেমে গেছে৷
এই জরিপে বামদল আগের মতোই ৮ শতাংশে ও সবুজ দল ৭ শতাংশে থাকার ফলে শুলৎসের নেতৃত্বাধীন সামাজিক গণতন্ত্রীরা এই দুই দলের সঙ্গে সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে – অর্থাৎ এসপিডি দলকে নির্বাচনে জিতলেও সিডিইউ-সিএসইউ দলের সঙ্গে ‘বৃহৎ জোটে' যেতে বাধ্য হতে হবে না৷
চার সপ্তাহে এসপিডি-র সমর্থন বেড়েছে ১২ শতাংশ
‘বিল্ড আম জোনটাগ' পত্রিকা বলছে যে, তাদের জরিপের ইতিহাসে এটা একটা রেকর্ড: কোনো দল এত কম সময়ে তাদের জনসমর্থন এই হারে বাড়াতে পারেনি৷ ঠিক চার সপ্তাহ আগে মার্টিন শুলৎসকে এসিপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন করা হয়৷
শুলৎসের প্রতিকৃতি এখন সর্বত্র, ইন্টারনেটের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘মেম'৷ কখনও তাঁর পোস্টারের নীচে লেখা ‘মেগা', অর্থাৎ ‘মেক ইউরোপ গ্রেট এগেইন' – যাতে অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন'-এর প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে৷
মার্টিন শুলৎসকে রাজপুত্র বানানো হয়েছে জার্মানদের প্রিয় চকোলেট বিস্কুট ‘প্রিনৎসেন রোলে' বা প্রিন্স কুকি-র বিজ্ঞাপনের নকলে৷
আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ার সঙ্গে (শুলৎস) যে কোনো নিভৃত আলাপ করবেন না, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়....কেননা (শুলৎস) ফরাসি, ইংরেজি, জার্মান, স্প্যানিশ ও ইটালিয়ান বলতে পারেন'৷অথচ মার্টিন শুলৎস পেশায় বই-বিক্রেতা, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকও পাশ করেননি৷ জার্মান রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা একটি ছোট শহরের মেয়র হিসেবে৷ ইউরোপীয় সংসদের সভাপতি হিসেবে এই মার্টিন শুলৎস ইউরোপ জুড়ে সুনাম ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা স্বভাবতই তাঁকে আরো বেশি সাহায্য করবে৷
শ্র্যোডারের এজেন্ডার সংশোধন
সাবেক এসপিডি চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার তাঁর ‘কর্মসূচি ২০১০' নামের পরিকল্পনার মাধ্যমে জার্মানিতে সামাজিক ভাতা ও মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের সংস্কার করতে চেয়েছিলেন৷ সে সংস্কার যে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকটা সফল হয়, তা অনস্বীকার্য, যেমন অনস্বীকার্য যে, শ্র্যোডারের সংস্কারের ফলে জার্মানিতে ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে৷
শুলৎস গোড়া থেকেই সামাজিক গণতন্ত্রী মতাদর্শের একটি মূল ধারাতে ফিরে যাবার চেষ্টা করেছেন: সেই ধারাটি হলো সামাজিক ন্যায়৷ এবার তিনি সেই ধারাটিকে বাস্তব রূপ দেবার কথা বলেছেন ‘বিল্ড' পত্রিকার একটি সাক্ষাৎকারে৷
জার্মানিতে প্রাথমিক বেকার ভাতা দেওয়া হয় প্রথম ১২ মাস অবধি: শুলৎস বলেছেন যে, তিনি এই মেয়াদ বাড়াতে রাজি৷ অপরদিকে ৩৫ বছর পেনশন ফান্ডে অনুদান দেবার পরেও যাদের অবসর ভাতায় জীবনধারণ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়, তাদের জন্য একটি নতুন ‘‘সংহতি'' পেনশন চালু করার কথা বলেছেন শুলৎস৷ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জোট সহযোগী বামদল স্বভাবতই শুলৎসের এই ‘বাঁদিক ফেরায়' খুশি – আবার সন্দিগ্নও বটে৷
অপরদিকে শুলৎস সামাজিক গণতন্ত্রী রাজনীতির অপর একটি ধারাকে সঞ্জীবিত করতে সচেষ্ট: সেটা হলো শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে এসপিডি দলের প্রথাগত মৈত্রী৷ ঘণ্টা হিসেবে কাজের কন্ট্র্যাক্ট কমাতে চান শুলৎস; কোম্পানিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের আরো বেশিভাবে সংশ্লিষ্ট করতে চান; এছাড়া কর্মী পরিষদের নির্বাচন যারা আয়োজন করেন, সেই সব শ্রমিক-কর্মচারীদের বরখাস্ত করা যাতে আরো কঠিন হয়ে পড়ে, তার ব্যবস্থা করতে চান৷
জার্মান শ্রমিক সংগঠন সমিতি ডিজিবি ইতিমধ্যেই শুলৎসের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে৷
এসি/ডিজি (ডিডাব্লিউ, রয়টার্স)