বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ এর প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়৷
আগুনের সূত্রপাত
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ কীভাবে আগুন লাগলো সেটা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা অথবা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি৷
অতীতেও ভয়াবহ আগুন
এর আগে ১৯৯৫ সালে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে দোকানপাট পুড়ে যাওয়ার পর নতুন করে আবার দোকান বসানো হয়৷ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এ মার্কেটে চারটি ইউনিট মিলে প্রায় আড়াই হাজার দোকান ছিল বলে জানা যায়৷
মালামাল নিয়ে রাস্তায়
আগুন লাগার পর যে যেভাবে পেরেছেন দোকানের মালপত্র সরিয়েছেন৷ বঙ্গবাজার এলাকার আশেপাশের সড়কগুলো কাপড়ের বস্তায় ভরে গেছে৷
সমস্যা বাতাস
ঢাকার গুলিস্তান বঙ্গবাজারে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে বারবার৷ সেখানে কিছুক্ষণ পরপর বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুন নেভানোর পরেও সে জায়গায় আবারও আগুনের সূত্রপাত হয়েছে৷
সকল বাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম
ঢাকার গুলিস্তানের আগুন নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছেন বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একাধিক দল৷ সকালে বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারের সাহায্যে পানি ছিটানোর কাজ করে৷
চোখের সামনে সব পুড়ে শেষ
বঙ্গবাজারের পাশের গলিতেই আহাজারি করতে দেখা যায় শাড়ির ব্যবসায়ী মোঃ সাব্বির আহমেদকে৷ তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার নতুন শাড়ি তুলেছিলেন তিনি৷ চোখের সামনেই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
জনতার ভিড়
বঙ্গবাজারের আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার জনতা ভিড় করে৷ যার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়৷
আগুন পুরোপুরি নেভার আগেই ভবনে প্রবেশ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অভিযোগ করেন, আশেপাশের যে সকল ভবনে আগুন লেগেছে, সেসব ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মালামাল বের করতে ভিতরে প্রবেশ করেছেন৷ এতে যে কোনো সময়ে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল৷
টাকার সিন্দুক উদ্ধার
বঙ্গবাজারের সাদমান গার্মেন্টস-এর স্বত্বাধিকারী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, তার দোকানের একটি লকার উদ্ধার করা গেছে, এতে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ছিল৷ তবে টাকাগুলো অক্ষত আছে কিনা, সেটা তালা ভাঙার আগে বোঝা যাচ্ছে না৷
অক্ষত মালামাল উদ্ধারে চেষ্টা
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেটের নিচতলায় দেখা যায়, সেখানে আগুন নেভানোর সাথে সাথে দোকানের মালিক-কর্মচারী মিলে দোকানের শাটার ভেঙে মালপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ তবে সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় কেউই অক্ষত কিছু উদ্ধার করতে পারেননি৷
সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি দোকানের মালিক, কর্মচারী, এলাকাবাসী সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন৷ যে যেভাবে পেরেছেন নিজেদের উদ্যোগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন৷
অভিযোগ
গুলিস্তান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশেই বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে৷ ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র জানান, খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান৷ তবে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস যদি ঠিকমতো কাজ করতো তাহলে এত দোকান পুড়ে ছাই হত না৷
ক্ষতিগ্রস্ত আশেপাশের ভবনও
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের মার্কেট৷ তার উপর সামনে ঈদ-উল-ফিতর হওয়ায় সেখানে কাপড়ের সরবরাহ অনেক বেশি ছিল৷ বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাশের অ্যানেক্স ভবনসহ অন্যান্য ভবনেও আগুন লেগে যায়৷
পানির উৎসের অভাব
ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নিলেও আশেপাশে বড় কোনো পানির উৎস না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছিল৷
ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা ২০১৯ সালে এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম এবং ব্যানারও লাগিয়েছিলাম৷ এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল৷ আমার করণীয় যা যা ছিল তা করেছি৷ এরপরেও এখানে ব্যবসা চলছিল৷’’
ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস
বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷ তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যববসায়ীদের ক্ষতি নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে৷” মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী৷
আহত
ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ ৮ জন আহত ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷