বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা, ১৩ শিক্ষক কারাগারে!
২৪ আগস্ট ২০১৭আসামিপক্ষের আইনজীবী নুরুল আবসার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি সরাসরি প্রশ্নের ভাষায় বলতে পারছি না৷ তবে প্রশ্নটি ছিল এরকম, ‘‘বাঁশখালির গন্ডামারার জনৈক ‘এল' কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন৷ তাঁর নেতৃত্ব কোন দেশের কোন নেতার সঙ্গে তুলনীয়?'' তিনি বলেন, ‘‘প্রশ্নটি এই মূহূর্তে আমার কাছে নাই৷ তাই হুবহু ভাষা বলতে পারলাম না৷ তবে মূল বিষয় এ রকম৷ প্রশ্নের কোথাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং লিয়াকত আলীর নাম নেই৷ তবে এটা ধরলে ধরা যায়৷ আবার না ধরলেও না ধরা যায়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক হলেন দুকুল বড়ুয়া৷ অন্য শিক্ষকরা প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়ি নয়৷ তাঁরা এই প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছেন সত্য৷ কিন্তু আগে তো প্রশ্ন দেখার তাঁদের সুযোগ ছিল না৷ তাই আমি মনে করি, দুকুল বড়ুয়া ছাড়া বাকি ১২ জন অব্যাহতি পেতে পারেন৷''
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ‘‘গত বছরের ১৭ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালিসহ ছয়টি উপজেলায় নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বিষয়ের সৃজনশীল অংশের একটি প্রশ্নে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর কার্যক্রমকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তুলনা করা হয়৷'' লিয়াকত আলী এর আগে ঐ বছরের এপ্রিল মাসে বাঁশখালির গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন৷ আন্দোলনে চারজন নিহত হন৷
পরীক্ষার এক দিন পর ১৯ জুলাই প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত বাঁশখালি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া ও তাহেরুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে৷ পরে চট্টগ্রাম জেলার ছয় উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৩ শিক্ষককে আসামি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়৷''
শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া ৪৯ দিন এবং তাহেরুল ১৫ দিন পর জামিনে মুক্তি পান৷ মামলা হওয়ার পরে ওই ১৩ শিক্ষক হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের আগাম জামিন নেন৷ বুধবার আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পর তাঁরা বাঁশখালির জ্যেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো. সাজ্জাদ হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করতে গেলে আদালত তাঁদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল আবসার বলেন, ‘‘এটা আদালতের মামলা৷ আদালত মামলা নিয়েই আসামিদের সমন দেন৷ পুলিশ এরই মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে ১৩ জনকেই দায়ী করা হয়েছে৷ কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষক ছাড়া অন্য ১২ জনকে দায়ী করার সুযোগ নাই৷ আর অপরাধটি আমি কীভাবে বিবেচনায় নেব তা অনেকটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে৷ কারণ, অপরাধ যদি হয়েই থাকে তা সরাসরি নয়৷ পরোক্ষভাবে করা হয়েছে৷ উদ্দেশ্য প্রমাণ করে গেলে এটা অপরাধ৷''
বাঁশখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি৷ তাতে আমরা অপরাধের প্রমাণ পেয়েছি৷ বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধুকে চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷ ১৩ জন শিক্ষকই এই ষড়যন্ত্র করেছেন৷''
ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য জানতে পেরেছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘না, তদন্তে উদ্দেশ্য জানতে পরিনি৷''
লিয়াকত আলী এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, তাঁর জড়িত থাকার কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি৷ প্রমাণ পাওয়া গেলে তো তাঁর বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেয়া হতো৷''
তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার হোসনে আরা বেগম এবং বাঁশখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী সাহেল তস্তুরির বক্তব্য জানা যায়নি৷ তাঁরা দু'জনই ওই ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷
বন্ধু, প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷