‘বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচা নয়'
৩১ জানুয়ারি ২০১৭ডয়চে ভেলে: অমর একুশে গ্রন্থমেলা তো একেবারেই দোড়গোড়ায়, এবারের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে?
শামসুজ্জামান খান: এ বছর শুধুমাত্র অমর একুশে গ্রন্থমেলা নয়, একইসঙ্গে বড় আকারে হতে চলেছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন৷ সেই সম্মেলনে বিদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন ছ'জন বিশিষ্ট কবি৷ জার্মানি থেকে ইউনা বুলগার্ড ও টোবিয়াস বুলগার্ড, ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে লুস টেরিনা লোপেজ, রাশিয়া থেকে ড. ভিক্টর এস্টরিক আমাদের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন৷ আর চীন থেকে আসছেন প্রফেসর ডং স্যান৷
এখানকার প্রস্তুতি কেমন?
এখানকার প্রস্তুতি চলছে৷ আমরা আমাদের লেখক-কবিদের নিয়ে অনেকগুলো বৈঠক করে কর্মসূচী ঠিক করে ফেলেছি৷ ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাহিত্য সম্মেলনটা হবে৷ পাশাপাশি বইমেলার প্রস্তুতি পুরোদমেই চলছে৷ আমরা আশা করছি, পহেলা ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছরের মতো মাসব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করবেন৷ সেই সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলনেরও উদ্বোধন হবে৷ সেই সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবাংলা ও বাংলা সাহিত্যের লেখকদের একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনও হবে৷ সেই সম্মেলনে পশ্চিমবাংলা থেকে যোগ দেবেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কথা সাহিত্যিক নবনিতা দেব সেন, ড. সুনিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখপধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, কথা সাহিত্যিক সাধন চট্রপধ্যায়সহ অনেকেই৷
এবারের মেলা নিয়ে বিশেষ কী আয়োজন থাকছে একাডেমির?
এবারের বিশেষ আয়োজন সাহিত্য সম্মেলন৷ ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি এমন একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যার উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ এবার অনেক বছর পর সেই একই ধরনের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনে আপনাদের সীমাবদ্ধতা কী?
সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন কেন আসছে সেটা বুঝতে পারছি না৷ আপাতত সীমাবদ্ধতার জায়গা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না৷ আমরা দেখছি যে, কাজ ভালোভাবেই চলছে৷ যেভাবে আমরা করতে চাই সেভাবেই হচ্ছে৷
বইমেলার সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সবাই৷ তা সময়সীমা কী বাড়ছে?
এটা তো আপনারা আগেই জেনেছেন যে, এবার বইমেলার সময় আধা ঘণ্টা বড়ানো হচ্ছে৷ আগে বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৮টায় শেষ হতো৷ এখন সেই সময় আধা ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত সাড়ে ৮টা করা হয়েছে৷
মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার ব্যাবস্থা নেই, নেই কোনো রেস্টুরেন্ট৷ যেন শুধু বইয়ের বাজার, কেনাবেচার বাইরে এটা তো একটা মিলমেলাও, তাই না?
গত বছরই মেলার ভেতরে পর্যটনের একটা খাবারের স্টল ছিল৷ এছড়াও আরো একটি খাবারের স্টল ছিল৷ এবার আরো দু'টি বাড়বে৷ পর্যটনের একটা স্টল থাকবে বাংলা একাডেমির নবনির্মিত ড. এনামুল হক ভবনে৷ আরেকটি থাকবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে৷ এছাড়া বাংলা একাডেমির ভেতরে আরো একটি স্টল থাকবে৷ অপর একটি স্টল থাকবে এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেও৷ তাছাড়া মাঝে মধ্যে ভেতরে বসার জন্য বাশ দিয়ে ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷
এবার স্টল বরাদ্দ হচ্ছে কতগুলো? বা অন্যান্য বছর যে স্টলগুলো থাকে, এবারও তো সেই স্টলগুলোই থাকছে? নাকি নতুন কোনো স্টল যোগ হচ্ছে?
তারা থাকবে৷ এর সঙ্গে আরো ১৫-২০টি স্টল যোগ হবে বলে আমরা আশা করছি৷
মেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি কেমন?
নিরাপত্তার ব্যাপারটা তো নিরাপত্তা বাহিনীর লোকরাই ভালো বলতে পারবেন৷ তারা আমাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হবে সবচেয়ে ভালো৷ আগের যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের ব্যবস্থা হবে আরো সুদৃঢ়৷
বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের তো কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আপনার এ ব্যাপারে কি কোন নির্দেশনা আছে?
সেগুলো তো আছেই৷ তাছাড়া তারাও যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ সিসি টিভির ব্যবস্থা থাকবে, অন্য ব্যবস্থাও থাকবে৷ পুলিশের ক্যাম্প থাকবে, সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে৷ আর নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু গোপনীয়তা তো আছেই, যেটা নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা আমাদেরও বলবে না৷ আমরা অবশ্য জানতেও চাই না৷ আমরা শুধু আশা করছি, এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো হবে৷
বইয়ের ক্রেতা-বিক্রেতা – সবার প্রতি আপনার আহ্বান কী?
এই মেলাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নান্দনিক ও সংস্কৃতিমনোস্ক মেলা হিসেবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলেই এটা হবে আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ট সংযুক্তি৷ এই মেলা করার মধ্য দিয়ে শুধু বইয়ের বেচা-কেনাই তো নয়, সংস্কৃতির একটা অগ্রযাত্রা, সংস্কৃতির একটা তাৎপর্য তৈরি হয়েছে৷ যেমন দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মানবিক একটা দেশ হিসেবে টিকে আছে৷ এবারের বইমেলা সেই লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই সহায়ক হবে৷
আমরা দেখছি প্রতি বছরই বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে৷ কিন্তু মানের দিক দিয়ে যেসব নতুন লেখক আসছেন, তাঁদের বই নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে৷ এটা নিয়ে বাংলা একাডেমির কিছু করার আছে কি?
এটা নিয়ে একাডেমির কিছু করা সম্ভব না৷ আমরা চেষ্টা করছি, যাতে উঁচুমানের বইগুলো আসে৷ প্রকাশকরা সতর্ক ও সচেতন হলেই কেবল সম্ভব৷ তারা যদি কখনও কখনও লেখকদের বা অলেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যে বই প্রকাশ উপযোগী না সেই বই ছাপেন, তাহলে বাংলা একাডেমি কী করবে?
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷