তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও বিস্ময়
১১ এপ্রিল ২০১৬এমনভাবে তারা নিঃশব্দে জলের অন্ধকারে তলিয়ে যান, যেন ভারশূন্য৷ শুধু একবার মাত্র দম নিয়ে এই ডুবুরিরা এমন গভীর জলে নেমে যান, যেখানে অক্সিজেন ছাড়া পৌঁছনো সম্ভব নয়৷ ফ্রি ডাইভার ডরিস হোফারমান বলেন, ‘‘ফ্রি ডাইভিংয়ে আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করে তার নিস্তব্ধতা৷ মানুষ যেন নিজের ভিতরে দেখতে পায়, শুনতে পায়৷ সম্পূর্ণ একা অবস্থায় নিজের ভয়ভীতিগুলোকে চিনতে পারে৷ সেই কারণে কোনো কোনোদিন আগেই ফিরে আসি; আবার কোনোদিন ক্রমেই আরো গভীরে নেমে যাই৷''
ফ্রি ডাইভাররা তাদের বিশেষ দম নেওয়ার পদ্ধতি আর বহু বছরের প্রশিক্ষণের কল্যাণে চিকিৎসাশাস্ত্রের কাছেই এক আশ্চর্য৷ ডরিস হোফারমান ছয় মিনিট অবধি দম আটকে থাকতে পারেন৷ অ্যাপনিয়া ডুবুরিরা এমন সব রেকর্ড সৃষ্টি করেন, বিজ্ঞানে যার ব্যাখ্যা মেলে না৷ মানুষের শরীর এতক্ষণ অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারে কি করে? বন শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে এই ‘মীন মানবদের' রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চলেছে৷
বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের অ্যানেস্থেটিস্ট ড. লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘সাম্প্রতিককালে আমরা (এই অ্যাপনিয়া ডাইভারদের) এমন সব পারফর্মেন্স দেখেছি, যা আগে ভাবাও যেত না৷ চিকিৎসক হিসেবে আমরা এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না৷ সেই কারণেই আমরা জানতে চাই, মানুষের শরীর এটা করে কিভাবে৷''
ফ্রি ডাইভারদের আশ্চর্যজনক ক্ষমতার কারণেই তাদের নিয়ে গবেষকদের মাতামাতি৷ পরীক্ষার সময় তাদের হাত-পা ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা হয়৷ শরীরের নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন মিনিটের পর মিনিট আটকে রাখতে পারেন ডরিস হোফারমান৷ তা করার জন্য তাঁকে নানা আদিম ভয়ভীতি জয় করতে হয়, শরীরকে তার ক্ষমতার সীমানা অবধি ঠেলে নিয়ে যেতে হয়৷ লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘মাথায় অক্সিজেন থাকে হাত-পায়ের চেয়ে অনেকক্ষণ বেশি৷ আমরা যেন একটা জটিল প্রক্রিয়ার সন্ধান পাচ্ছি৷ আমরা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি, একটা মানুষ কোনোরকম ব্রেন ড্যামেজ ছাড়া এতক্ষণ দম আটকে রাখতে পারে কী করে৷''
দৃশ্যত মানুষের শরীরে কোনো এমার্জেন্সি প্ল্যান বা জরুরি অবস্থা মোকাবেলার ব্যবস্থা আছে, যা সংকট পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াগুলোকে অনেকক্ষণ চালু রাখে৷