ফিলিস্তিনের পাথর ছোঁড়া তরুণেরা
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনি তরুণরা৷ নাম প্রকাশ না করে তাঁরা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
সম্বল গুলতি
গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গুলতি হাতে এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রুখতে আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে এই গুলতি দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে৷ আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে সব আরব ও মুসলিম এক হয়েছে৷’’
জেরুসালেম যেন শরীরেরই অংশ
এই বিক্ষোভকারী তরুণের বক্তব্য, ‘‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে চাই যে, জেরুসালেম আমাদের শরীরের অংশ, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না৷ আমরা জেরুসালেমকে ভালোবাসি এবং একে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে রক্ষার জন্য সবকিছু, এমনকি আমাদের প্রাণও উৎসর্গ করে পারি৷ বিশ্ব যদি সদয় হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’’
‘‘গুলতি হাতে মানুষ’’
এই নামেই পরিচিত ছবির এই তরুণ৷ তাঁর কথা, ‘‘আমি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই৷ আমার সংশ্লিষ্টতা জেরুসালেমের সঙ্গে৷ আমি একটা বিষয় জানি, যারা আমাকে গাজায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যারা আমাকে গাজার বাইরে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ঐ বেড়ার পেছনে রয়েছে, তারা হচ্ছে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী৷’’
ইহুদিদের বিরুদ্ধ লড়াই
মুখে মাস্ক পরা এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলছেন, ‘‘বিশ্বের অবশ্যই বোঝা উচিত যে, বেকারত্ব আমাদের যোদ্ধা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আমরা হামাস কিংবা ফাতাহর বিরুদ্ধে লড়বো না, আমরা শুধু ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়বো৷ হামাস আর ফাতাহর মধ্যে বিভাজনের সমাপ্তি ও আরও বিদ্যুতের দাবিতে ডাকা সমাবেশে আমরা অংশ নিয়েছি৷ কিন্তু আমরা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দিকে পাথর ছুড়তে রাস্তায় নামবো না৷’’
বঞ্চনার শিকার
‘‘একজন তরুণ হিসেবে আমি একটি সম্মানজনক জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমার এই অবস্থার জন্য যেটা দায়ী সেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমি বিদ্রোহ করতে পারি৷ অ্যামেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদাররা আমাদের মাতৃভূমিকে অবরোধ করে রেখেছে৷’’
স্বপ্নের কথা
‘‘আমি আশা করছি, আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবো৷ আমি সবসময় চাকরি আর চলাফেরার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি৷’’
দুর্ভোগের প্রতিবাদ
আহত বন্ধুর শরীরের রক্ত আবু জাবেরের হাতে লেগে রয়েছে৷ সে বলছে, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্প যে উন্মাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি৷ আমার হাতে যে রক্ত দেখছেন তা আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ দেবে বলে আমি আশা করি৷’’
অন্য উপায় নেই
‘‘আমরা ক্ষুধার্ত৷ ঘরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই, আমাদের বাবাদের চাকরি নেই৷ এই পরিস্থিতি প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না৷’’
অবরোধের প্রতিবাদ
‘‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি আমরা৷ অবরোধের কারণে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে৷ আশা করছি, শিগগিরই অবরোধ তুলে নেয়া হবে৷’’
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ
‘‘ইসরায়েল ও আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে৷ আমাদের ভূমিতে একজন ইসরায়েলি দখলদারি থাকা পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব৷ ট্রাম্প বা অন্য কেউ আমাদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷’’