1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোকামাকড়ের হামলায় বিপর্যস্ত জার্মানির বনাঞ্চল

২০ অক্টোবর ২০২০

বেড়ে চলা উষ্ণতা ও শুষ্ক আবহাওয়া সত্ত্বেও জার্মানিতে গাছপালা, বনজঙ্গল বাঁচিয়ে রাখতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷

https://p.dw.com/p/3kA7C
ছবি: Jan Eifert/dpa/picture-alliance

মিশ্র জঙ্গল, ভিন্ন জাতের গাছপালা লাগিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না৷

অন্য জাতের গাছও শুষ্ক আবওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ অনেক বিচ গাছের বাকল রোগের কবলে পড়ছে৷ ডাইপ্লোডিয়া নামের এক ছত্রাক এমন গাছ মেরে ফেলছে৷ লার্চ বার্ক বিটল পোকা লার্চ গাছের উপর হামলা চালাচ্ছে৷

হেসে রাজ্যের অরণ্যের একটা অংশ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্রায় ২০ হেক্টর জুড়ে প্রায় ৩০,০০০ সাইকোমোর গাছ দ্রুত কেটে ফেলতে হয়েছে৷ শুধু কিছু অবশিষ্ট অংশ পড়ে রয়েছে৷ উত্তর অ্যামেরিকা থেকে আসা এক ছত্রাকের কারণে সেই গাছগুলির ‘সুটি বার্ক ডিজিজ’ নামের রোগ হয়েছিল৷ সেই ছত্রাক গাছের বাকলের নীচে বেড়ে ওঠে৷ পর্যাপ্ত পানির অভাবে গাছ দুর্বল হয়ে পড়লে সেই ছত্রাক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় এক সেন্টিমিটার পুরু কালো স্তর সৃষ্টি হয়৷ সেই ছত্রাক মানুষের মধ্যেও মারাত্মক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে৷

বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও তাঁর সহকর্মীদের কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য বিশেষ মাস্ক পরে জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে হয়েছিল৷ বনবিভাগের কর্মকর্তা ইয়োর্গ হেসলার বলেন, ‘‘সেটা খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল, কারণ জার্মানিতে এর আগে এত বড় মাত্রায় এমন বিপর্যয় ঘটেনি৷ শহরের পার্কে বিচ্ছিন্ন কিছু গাছের এমন দশা হয়েছে৷ কিন্তু ২০১৮ সালের মারাত্মক গ্রীষ্মকালের পর এখানে এত বড় মাত্রার ক্ষতি হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বিপর্যয় ডেকে আনছে৷’’

নিজের অরণ্য এলাকার কিছু অংশে ইয়োর্গ হেসলার কোস্ট গ্র্যান্ড ফার, পাইন ও রেড ওক গাছ লাগিয়েছেন৷ বর্তমান জলবায়ুর সঙ্গে এমন গাছ আরও সহজে মানিয়ে নিতে পারবে বলে তাঁর আশা৷ কিন্তু নতুন প্রজাতির গাছগুলি ইতোমধ্যেই সমস্যার মুখে পড়েছে৷ ইয়োর্গ হেসলার বলেন, ‘‘বিশেষ ধরনের মথের কারণে ওক গাছের সমস্যা শুরু হয়েছে৷ আমরা এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও বিষয়টিকে উপেক্ষা করা যায় না৷’’

চারাগাছ টিকিয়ে রাখতে ইয়োর্গ ২০টি পানির আধার প্রস্তুত রেখেছেন৷ দীর্ঘ সময় ধরে শুষ্ক মরসুম চললে তিনি সেগুলি ব্যবহার করছেন৷ তাতে কাজ হচ্ছে কিনা, তিনি অদূর ভবিষ্যতেই জানতে পারবেন৷

বন বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে পেট্রা ভেস্টফাল আকাশ থেকে বার্ক বিটল পোকার মোকাবিলার আশা করছেন৷ ফরেস্ট্রি বিজ্ঞানী ও ড্রোন বিশেষজ্ঞরা মিলে এমন চালকবিহীন এরিয়াল ভেহিকল তৈরি করছেন, যার মধ্যে গ্যাস সেন্সর থাকবে৷ বার্ক বিটল কোনো গাছে হামলা চালালে রজনের যে গন্ধ বের হয়, সেন্সর তা টের পাবে৷ বন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেবাস্টিয়ান পাচকভস্কি বলেন, ‘‘বার্ক বিটল যা করে, আসলে আমরাও সেটাই করছি৷ সেই পোকা গন্ধ শুঁকে আক্রান্ত গাছে ঢুকে গর্ত করে৷ আর আমরা গাছ শনাক্ত করে সেটি সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করছি৷’’

বিটল বংশবৃদ্ধি করার আগে, প্রথম পর্যায়েই সেই গাছ কেটে ফেলা এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ তবে ডিটেক্টর ড্রোন এখনো বিক্রির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয় নি৷ পেট্রা ভেস্টফাল এই ড্রোন সম্পর্কে আশাবাদী৷ তিনি বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আরও দ্রুত, আরও বেশি সংখ্যক আক্রান্ত গাছ চিহ্নিত করতে পারবো৷ ফলে আমরা আরও বেশি গাছ বাঁচাতে পারবো৷’’

আপাতত জঙ্গলের পথের ধারে বিটল পোকায় আক্রান্ত স্প্রুস গাছের গুঁড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ কারণ বাজারে স্প্রুস কাঠের চাহিদা সীমিত৷ গাছের গুঁড়ি জঙ্গলে থেকে গেলে পোকার বংশবৃদ্ধি চলতেই থাকবে৷ সে কারণে আঞ্চলিক প্রশাসন কীটনাশক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, তার ফলে অন্য প্রাণীও মারা যাচ্ছে৷

ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিতে পেট্রা ভেস্টফাল সেখানে প্রকৃতির নিয়ম মেনে মিশ্র জঙ্গল সৃ্ষ্টি হতে দিতে চান৷ অর্থাৎ গাছই বীজ ছড়িয়ে সংখ্যা বাড়াবে৷ সে ক্ষেত্রে নানা জাতের গাছ বেড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ পেট্রা ভেস্টফাল বলেন, ‘‘সেটা এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ, যে ভবিষ্যতে জলবায়ু ও কীটপতঙ্গের কারণে কোনো বিশেষ প্রজাতির গাছ নষ্ট হলে, সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে অন্য জাতের গাছ লাগানো হবে৷’’

ভবিষ্যতের জঙ্গল কেমন দেখতে হবে, সে বিষয়ে এমনকি বিশেষজ্ঞরাও নিশ্চিত নন৷ জলবায়ু সংক্রান্ত পূর্বাভাষের ভিত্তিতে জারমানির মধ্যভাগে স্প্রুস ও বিচ গাছের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন৷ ২০৭০ সালের মধ্যে সেগুলি জার্মানির জঙ্গল থেকে সম্ভবত পুরোপুরি উধাও হয়ে যাবে৷

নিনা স্মিট/এসবি