পাঠ্যপুস্তক নিয়ে একের পর এক বিতর্ক
বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক চলছেই৷ সবশেষ সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ওয়েবসাইট থেকে চৌর্যবৃত্তির পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে অনুবাদেরও৷ পাঠ্যবই নিয়ে আরো কিছু বিতর্কের তথ্য জানুন ছবিঘরে৷
চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা ২০২৩ সালের সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি৷ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওয়েবসাইট থেকে কিছু অংশ সূত্র উল্লেখ না করেই হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ এর সত্যতাও পেয়েছেন রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান৷ এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে পরবর্তী সংস্করণে ভুল ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন তারা৷
যৌনশিক্ষা বাদ দেয়ার দাবি
ইসলামি ঐক্যজোট ২০১৬ সালে দাবি তোলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে যৌনশিক্ষা বাদ দেয়ার৷ ‘বাংলাদেশের সমাজ এবং ধর্মের সঙ্গে এই শিক্ষা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলে দাবি করেন দলটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী৷ নবম-দশম শ্রেণিতে বাউলদের নিয়ে লেখা ‘সময় গেলে সাধন হবে না' নামক বইটিকে ‘বাউলদের যৌনাচারের' বই বলে অভিহিত করেন তিনি৷
‘ইসলামি মূল্যবোধ’, ‘হিন্দুত্ব’ ও ‘নাস্তিক্যবাদ’
২০১৬ সালে হেফাজতে ইসলামী অভিযোগ তোলে যে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ইসলামী মূল্যবোধের ১৭টি বিষয় বাদ দিয়ে ইসলামী ভাবধারার বিপরীত সাতটি নতুন কবিতা ও গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে কেন হিন্দু লেখকদের বিভিন্ন লেখা পাঠ্য়পুস্তকে প্রাধান্য পাচ্ছে, এ নিয়েও প্রশ্ন তোলে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা সংগঠনটি৷
হেফাজতের ‘দাবি পূরণ’
যেসব গল্প-কবিতা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আপত্তি ছিল, তার একটি পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের 'বই' কবিতা৷ হুমায়ুন আজাদকে ‘স্বঘোষিত নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার কবিতা ইসলামবিরোধী দাবি করে তা বাদ দেয়ার আহ্বান জানায় সংগঠনটি৷ পরের বছর হেফাজতের পছন্দের তালিকার ১৭টি আবার পাঠ্যপুস্তকে ফিরিয়ে আনা হয়, বাদ দেয়া হয় হেফাজতের অপছন্দের ১২টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ৷
যৌন নির্যাতন থেকে ‘বাঁচার কৌশল’
২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচার কিছু কৌশলের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷ বাড়িতে কখনোই একা না থাকা, অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা এবং পাড়ার বখাটে দলের হয়রানিতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না করে কৌশলে উপেক্ষা করাসহ বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক উপদেশ দেয়া হয়েছিল মেয়েদেরকে৷
‘বিবর্তনবাদ’ বাদ দেয়ার দাবি
২০১৩ সালে নবম-দশম শ্রেণি থেকে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয় চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ৷ ২০১৯ সালে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা বাদ দেয়ার দেবি জানান হেফাজতে ইসলামীর তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী৷ বিবর্তনবাদকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বাবুনগরী বলেছিলেন, ‘‘বিবর্তন এর শিক্ষা চলতে থাকলে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর সবার অগোচরেই দেশ নাস্তিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’’
ওড়না আর ছাগল
২০১৭ সালেই প্রথম শ্রেণির বর্ণপরিচয়ে ‘ও’ বর্ণ শেখাতে লেখা ‘ওড়না দাও’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল৷ প্রথম শ্রেণিতেই একটি মেয়েকে এভাবে বর্ণপরিচয় শেখানোর বিরোধিতা করেন অনেকে৷ একই বইয়ে ’অ‘ বর্ণ শেখাতে ছাগলের অপ্রচলিত সমার্থক ‘অজ’ ব্যবহার করে ছবি দেয়া হয়েছে ছাগল আম গাছে উঠে আম খাওয়ার৷ পরের বছর ছাগল আমগাছ থেকে নামলেও, ওড়না প্রথম শ্রেণি থেকে সরিয়ে স্থান দেয়া হয় প্রাক-প্রাথমিকে৷
ভারতেও পাঠ্যসূচি বিতর্ক
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিন্দুদের ইতিহাস’ পড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ সেন্টার ফর হিন্দু স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ অন্য ধর্ম বাদ দিয়ে কেবল হিন্দুদের ইতিহাস কেন পড়ানো হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ৷
বিশ্বজুড়ে বিতর্ক
পাঠ্যসূচি নিয়ে প্রায়ই বিশ্বের নানাপ্রান্তে বিতর্ক রাজনৈতিক রূপও নিয়েছে৷ ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় পাঠ্যক্রমকে সংকীর্ণ এবং সেকেলে দাবি করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকেরা৷ তারা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর না দিয়ে কেবল তথ্য জানানোতেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ পরবর্তীতে তাদের দাবি মেনে পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়৷
হাঙ্গেরিতে ইহুদিবিদ্বেষ, সাংস্কৃতিক যুদ্ধ
সমকামীদের অধিকার বিষয়ে স্কুলের শিশুদের না পড়ানোর নির্দেশ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তোপের মুখে পড়েছে হাঙ্গেরির কট্টর ডানপন্থি সরকার৷ তার ওপর ইহুদিবিদ্বেষী এবং উগ্র জাতিয়তাবাদী হিসাবে পরিচিত লেখকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করে ২০২০ সালে ন্যাশনাল কোর কারিকুলাম ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সরকার৷