পাঠ্যক্রম: যে দেশে যেমন
বাংলাদেশে বেশ কয়েকবছর ধরেই নিয়মিত আলোচনায় আসে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন। যুগোপযোগী শিক্ষা, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি- সবকিছুর সমন্বয় যেন কখনোই হয়ে উঠে না।
বাংলাদেশ
২০২১ সালে কম্পিটেন্সি বেইজড কারিকুলাম (সিবিসি), অর্থাৎ মেধার সঠিক পরিচর্যার উদ্দেশে মুখস্ত কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম থেকে সরে এসে দক্ষতাভিত্তিক পাঠক্রম প্রণয়ন করে বাংলাদেশ। এর মুল উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিষয় কমিয়ে যুক্তিযুক্ত চিন্তা করতে শেখানো ও তাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা। দশম শ্রেণির আগে কোনো বোর্ড পরীক্ষা না রাখারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ভারত
ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় পরিবর্তন হলো ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ ২০২০। এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আন্তঃবিষয়ক শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের পছন্দমতো বিষয় ও বিভাগ নির্বাচন করতে পারে। আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষা করেই চাকরির বাজারের চাহিদা অনুসারে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ শুরু করেছে দেশটি।
পাকিস্তান
পাকিস্তানের ‘সিঙ্গেল ন্যশনাল কারিকুলাম (এসএনসি) ২০২০-২১’-এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল দেশের বিদ্যমান সকল সরকারি, বেসরকারি ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমের একত্রীকরণ। এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সমান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও ব্যবধান কমিয়ে আনার প্রয়াস ছিল। পাঠ্যক্রমটিতে ধর্মীয় বিষয়গুলোর সঙ্গে আধুনিক বিষয়ের সংমিশ্রণ করা হয়। তবে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল দেশটিতে।
ইন্দোনেশিয়া
২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া ‘মারদেকা বেলাজার’ (শিক্ষার স্বাধীনতা) শিক্ষানীতি গ্রহণ করে, যা শিক্ষকদের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেয়। ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপ কমাতে বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করে দক্ষতা ভিত্তিক মূল্যায়ন চালু করা হয়। এই সংশোধনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল শিক্ষকদের জন্য নানাবিধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তারা শিক্ষার্থীদের প্রকল্পভিত্তিক কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন।
সৌদি আরব
‘ভিশন ২০৩০’-এর অধীনে পাঠ্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে সৌদি আরব তাদের দীর্ঘদিন ধরে চলমান ধর্মভিত্তিক পাঠ্যক্রমকে সংশোধন করে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যুক্ত করেছে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত করাই দেশটির প্রধান লক্ষ্য। যুক্তিযুক্ত চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতেই সৌদিআরব তাদের পাঠ্যক্রম থেকে ধর্মীয় বিষয়গুলো কমিয়ে এনেছে।
ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ডের ‘ফেনোমেনন বেইজড লার্নিং’ (পিবিএল) ভিত্তিক পাঠ্যক্রম প্রথাগত বিষয় বাদ দিয়ে বাস্তব দুনিয়ার সমস্যাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে রূপান্তর করে। শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ ও যুক্তিযুক্ত চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষার সংখ্যাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার ও ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশকেই ফিনল্যান্ডে গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি।