নোয়াপাড়ার জামদানি শিল্প
ঢাকা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ৷ আর সেখানে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী তীরে ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি তৈরি হচ্ছে বহুকাল ধরে৷
যেভাবে এলো জামদানি
জনশ্রুতি আছে অতীতে সোনারগাঁও সংলগ্ন এ এলাকার মানুষরা বিশ্বখ্যাত মসলিনের কারিগর ছিলেন৷ ইংরেজরা এ শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার পর, এ সব এলাকার মানুষেরা ফিরে যান কৃষি পেশায়৷ ইংরেজদের শাসনের অবসানের পর মসলিন শিল্পীদের বংশধররা আবারও শুরু করেন মসলিন তৈরি৷ কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন৷ মসলিনের আদলেই তাঁরা তৈরি করেন নতুন এক কাপড়, যা পরিচিত পায় জামদানি হিসেবে৷
ঘরে ঘরে জামদানি
নারায়ণগঞ্জে মূল জামদানিপল্লি আসলে বিসিক শিল্প এলাকায়৷ তবে এর বাইরেও নোয়াপাড়ার বাড়িতে বাড়িতে আছে বেশ কিছু জামদানির কারখানা৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এ সব কারখানায় চলে জামদানি তৈরির কাজ৷
জামদানি শিল্পী
একেকটি জামদানি কারখানায় চার থেকে ২৪ জন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেন৷
যত শাড়ি তত মজুরি
জামদানি কারখানাগুলোর সার্বক্ষণিক দেখভাল করেন মহাজন৷ বেশিরভাগ জামদানি শ্রমিক মজুরি পান শাড়ি প্রতি চুক্তি হিসেবে৷
শিশুশ্রম
সাধারণত একটি শাড়ি তৈরি করতে দু’জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়৷ একজন কারিগর ও অন্যজন তাঁর সাহায্যকারী৷ সাহায্যকারীর ভূমিকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশুরাদের৷
৮০ হাজার টাকা মজুরি
একটি জামদানি শাড়ি তৈরিতে ন্যূনতম তিন দিন সময় লাগে৷ নকশা আর কারুকাজভেদে কোনো কোনো শাড়িতে তিন মাসও লেগে যায়৷ একটি শাড়ি তৈরি করে দু’জন শ্রমিক দুই হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পান৷
নারীদের দক্ষতা
জামদানি তৈরিতে নারিরাও বেশ দক্ষ৷ বেশিরভাগ কারখানাতেই নারী শ্রমিকের উপস্থিতি দেখা যায়৷
পরিবারের সবাই মিলে..
বিভিন্ন মহাজনী কারখানা ছাড়াও বিসিক শিল্প নগরী ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে দু-একটি করে তাঁত আছে৷ পরিবারের সবাই মিলে এ সব তাঁতে জামদানি তৈরি করেন৷
তাঁত চালু থাকে সারাক্ষণ
জামদানি পল্লীর তাঁতগুলো সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে রাত অবধি চালু থাকে৷ তবে শুক্রবার বাজারের দিন এ পল্লীতে কাজ কম হয়৷
প্রাচীন জামদানি হাট
সারা সপ্তাহের বোনা জামদানি নিয়ে মহাজন ও কারিগররা জড়ো হন শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরের প্রাচীন জামদানি হাটে৷ প্রতি শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যেই হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়৷ এ হাটে সাধারণত সারা দেশের পাইকাররাই আসেন৷
শিল্পনগরীতেও হাট
জামদানি শিল্পীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক জামদানি শিল্পনগরীতেও একটি হাট স্থাপন করে দিয়েছে৷ এ হাটটিও প্রতি শুক্রবার একই সময়ে বসে, তবে দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়৷
বিক্রয়কেন্দ্র
জামদানি হাট ছাড়াও নোয়াপাড়ার বিসিক জামদানি শিল্পনগরীতে আছে বেশ কিছু ছোট বড় বিক্রয় কেন্দ্র৷ এ সব দোকান থেকেও পাইকারি ও খুচরা মূল্যে জামদানি বিক্রি হয়৷
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি
বয়নের অতুলনীয় পদ্ধতি আর শিল্পমানের কারণে জামদানি ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে৷
হরেক রূপে জামদানি
জামদানি বলতে সবাই সাধারণত শাড়ি বুঝলেও বর্তমান সময়ে জামদানি দিয়ে পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ এমন কি সোফার কভার, কুশন কভার, ঘরের পর্দা ইত্যাদিও তৈরি হচ্ছে৷