নির্বাচনের আমেজ নেই, আওয়াজ আছে আন্দোলনের
২৫ আগস্ট ২০১৮ধারণা করা হচ্ছিলো যে এবার নির্বাচনের আগে সর্বশেষ ঈদে নির্বাচনী রাজনীতি জমে উঠবে৷ আর তা অব্যাহত থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত৷ কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি৷ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজনীতিবিদরা বরাবরের মতই এলাকায় ছিলেন৷ কিন্তু সেটা তারা সাধারণ নিময়মেই গেছেন৷
কেউ কেউ একটির জায়গায় দু'টি অথবা যিনি দু'টি গরু কোরবানি দিতেন তিনি হয়তো তিনটি দিয়েছেন, তবে তাতে তেমন নির্বাচনী আমেজ ছিল না৷ জনসংযোগ বা ভুড়ি ভোজের আয়োজনেরও তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷ যদিও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নামে কোরবানি দিয়েছেন দলীয় নেতারা৷
এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদের যার যার এলাকায় ঈদের সময় থাকার নির্দেশ দেন৷ সবাইকে নিয়ে ঈদ করার কথা বলেন৷ বিএনপিও কেন্দ্রীয়ভাবে একই ধরণের নির্দেশনা দিয়েছিল৷ কিন্তু তাতে বাড়তি কোনো প্রভাব পড়েনি৷
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে না থাকলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কী রকম হবে সেটা নিয়ে সংশয় আছে৷ তাই আগেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনসংযোগ ও ভোটের আশায় নানা খাতে অর্থ খরচে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না৷ তাঁরা আরো অন্তত এক মাস দেখতে চান৷ অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান৷
বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে কিনা, সে নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি৷ যদিও তারা এখনো বলছেন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি৷ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবেনা৷ তাই নির্বাচনের আগে তার মুক্তির জন্য যা যা করণীয় তা দল করছে এবং করবে৷ আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ প্রস্তুতিও চলছে৷ আর আন্তর্জাকিভাবে চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে৷ আমাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী মাসে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড মামলার রায় হবে৷ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ওই রায়ের পর বিএনপি আরেকটি সংকটে পড়বে৷ এতে বোঝা যায় এই রায়ও পূর্ব নির্ধারিত৷ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে কনভিক্টেড করা হবে৷ যেভাবে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে৷''
নির্বাচন কমিশন আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে৷ আর নির্বাচনকালীন সরকারও ওই মাসেই গঠিত হওয়ার কথা৷ ওই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আকার হবে ছোট৷ সরকারে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধি নেয়া হতে পারে৷ তবে এই সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার৷ তাই নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু৷ দেশের মানুষের মনে এখনো নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে৷ তারা নিশ্চিত নয় যে নিজেদের ভোট দিতে পারবেন কিনা৷ তাই নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি৷''
নির্বাচন নিয়ে নানা তৎপরতা আছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে৷ ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরী একটি জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন৷ সেখানে বিএনপি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে৷ তবে বিএনপিকে ওই জোটে থাকতে হলে জামায়াতের ব্যাপারে অবস্থান পরিস্কার করতে হবে৷ আর তাদের ওই জাতীয় ঐক্যজোটের নেতৃত্ব কে দেবেন তা এখনো অমীমাংসিত৷ জোট হলেও তাঁরা নির্বাচনসহ কয়েকটি ইস্যুতে আন্দোলনে যাবেন৷
বাম দলগুলোও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার কথা বলছে৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের পরিধি আরো বাড়ানোর কাজ চলছে৷
আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে আগেই কাজ শুরু করেছে৷ কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনপি কি সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের এবং তাদের শরীকদের রাজনৈতিক তৎপরতা কোন দিকে যায় তা দেখে সরকার এবং আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে৷ নির্বাচনের আগে সরকার দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দিতে চায় না যা নতুন কোনো সংকটের তৈরি করে৷ এজন্য নানা ধরণের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মনিটরিংকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার৷
অবশ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি মনে করেন, ‘‘কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই দেশের নির্বাচনী রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে৷ দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী৷ তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত৷ সব দল এখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে৷ ফলে দলগুলো যে নির্বাচনী কাজ শুরু করে দিয়েছে তা স্পষ্ট৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না৷ তাকে আইনগতভাবে মুক্তির পথে এগোতে হবে৷ আর ২১ অগাস্টের মামলার রায় নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির মধ্যে ভীতি আছে৷ কারণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাসের এই জঘন্যতম হামলা হয়েছে৷ হামলার সময় বিএনপি-জমায়াত জোট সরকারে৷ তারা জানে কারা এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত৷ তাই তারা ভীত হবে এটাই স্বাভাবিক৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন হবে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে৷ এ নিয়ে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে লাভ হবেনা৷ বিশৃঙ্খলা করলে কি পরিণতি হয় তা গত নির্বাচনে তারা দেখেছে৷''
২০১৪ সালের ৫ জানুযারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ বাংলাদেশের এই সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন বিএনপি জামায়াত জোট বর্জন করে৷ তাদের ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে৷