নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি?
২২ মার্চ ২০২১ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসছেন ২৬ মার্চ৷ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতেই তার সফর৷ কিন্তু কিছু ইসলামি ও বাম রাজনৈতিক সংগঠন তার এই সফরের বিরোধিতা করছে৷ এমনকি তারা ২৬ মার্চ ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেয়ারও চেষ্টা করছে৷
শাসক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘ওদের ২৬ মার্চ খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ কিছু সংবাদমাধ্যম অহেতুক ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের টিআরপি বাড়াতে৷''
বিরোধিতা করছেন যারা:
হেফাজতে ইসলাম সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মোদীকে বাংলাদেশে না আনার আহ্বান জানিয়েছে৷ হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, ‘‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি তারা যাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীকে না আনেন৷ সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিলে আমরা আলেমদের সাথে কথা বলে কঠোর কর্মসূচি দেব৷''
তার মতে, ‘‘মোদী মুসলমানদের ঈমানের শত্রু, বাংলাদেশের জনগণের শত্রু৷'' তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে৷ তা না হলে সীমান্তে প্রতিদিন পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করত না৷ তারা বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজার করেছে৷''
সাতটি ছোট ইসলামি দলও এক হয়েছে মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে৷ শুক্রবার জুমার নামাজের পর তার বায়তুল মেকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে৷ সমমনা ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ক মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি বলেন, ‘‘আমরা মত বিনিময় করছি৷ মত বিনিময় শেষে নতুন কর্মসূচি দেব৷''
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর চাইছেন সবাইকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিতে৷ সেজন্য আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান৷ গণসংহতি আন্দোলনসহ আরো কয়েকটি সংগঠন নিয়ে তারা নতুন একটি জোট করে আগেই কিছু কর্মসূচি দিয়েছে৷ নুর বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি সবাই মিলে একটি কর্মসূচি দিতে৷ তবে সেটা ২৬ মার্চ না তার আগে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷''
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার৷ বাংলাদেশের মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানাচ্ছে না৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই দেশের ভোটারবিহীন সরকারকে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে বাংলাদেশের মানুষ মনে করে৷ নরেন্দ্র মোদী এবং তার দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে৷ সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বিভাজনের রাজনীতি নরেন্দ্র মোদী সরকার গ্রহণ করেছে এনআরসি এবং সিএএর মাধ্যমে৷ এটার মাধ্যমে শুধু ভারত নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প তৈরির চেষ্টা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই রকম সাম্প্রদায়িক ও বিভাজন সৃষ্টিকারীকে আমন্ত্রণ মানুষ গ্রহণ করছে না৷ আর বাংলাদেশের সাথে তো অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে৷''
গণসংহতি আন্দোলন ২৪ মার্চ মোদীর এই সফরের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবে৷
বিশ্লেষকেরা যা ভাবছেন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, মোদীর ঢাকাসফরের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ স্বাভাবিক৷ এরকম হওয়াই উচিত৷ না হলে সেটা ছিলো আশ্চর্যের৷ তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু যে আদর্শের, মোদী তার বিপরীত৷ তাই বঙ্গন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদীকে আমন্ত্রণ ঠিক মানায় না৷''
তার মতে, মোদী তার নিজের দেশেই একজন বিতর্কিত ব্যক্তি৷ সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, এনআরসি, তিস্তা, গুজরাট দাঙ্গা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এই সব মিলিয়ে বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে৷ মোদী বাংলাদেশ সফরকে তার রাজনৈতিক কারণেও ব্যবহার করছেন৷ তিনি ভোটের জন্যই ঢাকায় এসে মতুয়া সম্প্রদায়ের সাথে দেখা করতে যাবেন৷
তিনি মনে করেন, ‘‘সরকার এই প্রতিবাদকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও তারা তো বিব্রত হচ্ছে৷ কারণ বঙ্গবন্ধুর উল্টা চরিত্রের লোককে তার জন্মশতবার্ষিকীতে আনা হচ্ছে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘এই সফর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হলে আমার কোনো কথা নেই৷ কিন্তু বিজেপির নরেন্দ্র মোদীর হলে আমার কথা আছে৷ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ওয়েলকাম করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখি না৷'' তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী না হয়ে ইমরান খান হলে আমরা কী করতাম?''
‘২৬ মার্চ ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না'
সরকার এরই মধ্যে ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে৷ নগরবাসীকে প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে৷ আর এখনই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে৷ ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ এই নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়বে৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘২৬ মার্চ ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে? ওরা প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ৫০-১০০ জন মানুষ গলাবাজি করে আর মিডিয়া ফলাও করে দেখায় টিআরপি বাড়ানোর জন্য৷ এটা কোনো খবর? ফালতু বিষয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে৷ দেড় কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ আত্মার সম্পর্ক না থাকলে এরকম হয়? কোনো অমীমাংসিত বিষয় থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে৷''
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাকিস্তান পন্থীরা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর তাদের স্বার্থে ধর্মীয় ইস্যু, ভারত ও হিন্দু বিরোধিতা করে সমর্থন লাভের চেষ্টা করেছে৷ তারা এখনো সেই পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি করছে৷ অনেক দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আসছেন, সারা দেশের মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে৷''