দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের হার কমছে
১১ অক্টোবর ২০১১আজমল কাসভের কথাই ধরা যাক প্রথমে৷ মুম্বইয়ে হোটেল হামলা চালানোর এই একমাত্র জীবিত খলনায়ককে ভারতের আদালত মৃত্যুদণ্ড শুনিয়েছে৷ সোমবারের খবর, তার মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ আসলে, সোমবারটা ছিল আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ড রদ দিবস৷ সুপ্রিম কোর্ট যদিও তার বিবৃতিতে সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন নি৷ তবে মুম্বইয়ে ২৬ নভেম্বরের হামলা চালানোর একমাত্র জীবিত পাকিস্তানি নাগরিক আজমল আমির কাসভের মামলা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আফতাব আলম বলেছেন, এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেরা গুরুত্ব দিয়েই এর নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন৷
কাসভের ভাগ্যে কী আছে, তা বলবে সময়৷ তবে ভারতে এই ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে৷ রয়েছে পাকিস্তানে, দক্ষিণ কোরিয়ায়, বাংলাদেশে, চীনে এবং সব মিলে গোটা বিশ্বের ২৩টি দেশে৷ এমনকি খোদ অ্যামেরিকার বেশ কয়েকটি রাজ্যে এখনও বহাল এই মৃত্যুদণ্ড৷
কিন্তু কীভাবে এই শেষ দণ্ড প্রতিক্রিয়া তৈরি করে থাকে সমাজ? কী চোখে তাকে দেখে মানবাধিকার সংগঠনগুলি? কিংবা, কোনো একজন অপরাধীকে খতম করে দিলেই কী সেই অপরাধ খতম হয়ে যায় সমাজ থেকে? তার চরম মর্মান্তিক মৃত্যুর উদাহরণ কী আদৌ পরবর্তীতে অন্য অপরাধীদের মনের জগতে ভয়ংকর প্রভাব তৈরি করতে পারে? এসব প্রশ্ন এই আধুনিক সমাজের জন্য দরকারি বৈকি! মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেমন বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, মৃত্যুদণ্ড অনেক সময় এসে থাকে ব্যক্তিগত বদলা নেওয়ার মানসিকতায় পরিপুষ্ট হয়ে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামনেস্টির হয়ে একথা বলে সেখানকার কর্মরতা পাকিস্তানি নাগরিক রাফিয়া জাকারিয়া সংবাদসংস্থা আইপিএস'কে জানাচ্ছেন, বিচারব্যবস্থা শাস্তি দিতে পারে, কিন্তু বদলা নেওয়াটা বিচারব্যবস্থার কাজ নয়৷ তাছাড়া, ঘৃণার জন্ম দেওয়াটাও বিচারের লক্ষ্য হতে পারেনা৷
আসলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাঞ্জাবের প্রয়াত গভর্ণর সালমান তাসিরকে হত্যা করার জন্য মুমতাজ কাদরির মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এখন জনমত গড়ে উঠছে বিভিন্নভাবে৷ একদলের বক্তব্য, তাসিরকে কাদরি হত্যা করেছিল আবেগের বশে৷ তাই তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য নয়৷ আরেকদল চাইছে, মৃত্যুদণ্ড যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যকরী হোক৷ এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে, ধর্মীয় মৌলবাদীরা৷ যারা কাদিরকে ওই হত্যাকাণ্ডের পরে গোলাপের পাপড়ি বর্ষণ করে সম্মান জানিয়ে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল৷ ফলে, বিচারব্যবস্থা এইসব কিছুর ফাঁদে পড়ে বেকায়দায়৷ এমনটা মনে করছেন পাকিস্তানের সুশীল সমাজের একাংশ৷
পাকিস্তানের পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে অ্যামনেস্টি জানাচ্ছে, এ পর্যন্ত ৩৬৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে পাকিস্তানের প্রশাসন৷ তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে এই আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ড রোধের দিবস, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানে একটানা ১০৪০ দিন কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি৷ যদিও বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী জেলবন্দি হয়ে রয়েছে৷
ভারতের ক্ষেত্রেও ছবিটা অনেকটা একইরকম৷ সেদেশে ২০০১ সালে সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরু থেকে মুম্বই হামলার অন্যতম আসামী আজমল কাসভ পর্যন্ত বেশ কিছু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাদের সাজার কার্যকারীতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে৷ ভারতে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে কলকাতার একটি স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করার অপরাধে ধনঞ্জয় নামের এক ৪১ বছর বয়সী এক নিরাপত্তারক্ষীর৷ সে ঘটনা ২০০৪ সালের৷ ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে মৃত্যুদণ্ড আইন স্বীকৃত হলেও, সামাজিক ঘটনাবলী কিন্তু বলছে যে, তার সংখ্যা ক্রমশ কমতির দিকে৷
প্রতিবেদন: এএফপি/আইপিএস, সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ