দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের শিশুরা ভালো আছে
শিশু অধিকার বিষয়ে একমাত্র বৈশ্বিক সূচক হলো ‘কিডসরাইটস ইনডেক্স’৷ ২০২২ সালের সবশেষ সূচকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ৷
একমাত্র বৈশ্বিক সূচক
শিশু অধিকার বিষয়ে একমাত্র বৈশ্বিক সূচক হলো ‘কিডসরাইটস ইনডেক্স’৷ নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর এই সূচক প্রকাশ করে থাকে৷ সহযোগী হিসেবে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের এরাসমুস ইউনিভার্সিটি রটারডাম৷ শিশু অধিকার বিষয়ে বৈশ্বিক জনমত তৈরিতে এই সূচককে গ্রহণযোগ্য মনে করে জাতিসংঘ৷
যা বিবেচনায় নেওয়া হয়
মোট পাঁচটি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়৷ এগুলো হলো শিশুদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সুরক্ষার অধিকার ও শিশু অধিকার রক্ষার পরিবেশ কেমন৷
বাংলাদেশের অবস্থান
২০২২ সালের কিডসরাইটস ইনডেক্সে ১৮৫টি দেশের তালিকা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ আছে ১০২ নম্বরে- যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থান৷ এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় স্থানে৷ প্রথমে আছে ভুটান (৯৮)৷ অন্য দেশগুলোর অবস্থান ভারত (১১৫), মালদ্বীপ (১২৭), নেপাল (১২৯), শ্রীলঙ্কা (১৪৭) ও পাকিস্তান (১৪৯)৷
সবচেয়ে ভালো অবস্থানে যারা
কিডসরাইটস ইনডেক্সের শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, স্লোভেনিয়া ও নরওয়ে৷ জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন অনুমোদন না করায় যুক্তরাষ্ট্রকে এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷
যেসব দেশে শিশু অধিকারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চাড-এর৷ এর পরের স্থানগুলোতে আছে আফগানিস্তান, সিয়েরা লিওন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ডিআর কঙ্গো, গিনি, এল সালভেদর, পাপুয়া নিউ গিনি ও নাইজার৷
বাংলাদেশে পথশিশুদের অবস্থা
ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস-এর ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ বলছে, ৩০.১ শতাংশ শিশু পাবলিক বা খোলা জায়গায় (যেমন রাস্তাঘাট, স্টেশন, টার্মিনাল, মাঠ বা পার্ক) থাকে ও ঘুমায়৷ এদের মধ্যে ৭১.৮ শতাংশ পড়তে বা লিখতে পারে না৷ রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের ৮২.৯ শতাংশ পথচারীদের দ্বারা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়৷ ৪৯.৮ শতাংশ শিশু কাজের জায়গায় সহিংসতার শিকার হয়৷
প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থা
ইউনিসেফের সহায়তায় বিবিএস পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’ জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সি) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে৷ মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে৷
শিশু শ্রম
ইউনিসেফ ও বিবিএস-এর ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১.৩ শতাংশ শিশু (৫-১৭ বছর বয়সি) শিশুশ্রম, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বা উভয় ক্ষেত্রেই নিযুক্ত রয়েছে৷
শিশু শিক্ষা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৭.৪২ শতাংশ৷ প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করার হার ৮৫.৮৫ শতাংশ৷ আর মাধ্যমিক পর্যায়ে তালিকাভুক্তির হার ৭০.২৫ শতাংশ৷ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমাপ্তির হার ৬৪.২৪ শতাংশ৷
শিশু মৃত্যু
নবজাতকের (০-২৮ দিন বয়সি) মৃত্যুহার প্রতি এক হাজারে ১৫ জন৷ শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সি শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজারে ২১ জন৷ আর পাঁচ বছরের কমবয়েসি শিশুর মৃত্যুহার প্রতি এক হাজারে ২৮ জন৷