তেলের দাম কমায় বিপদে যারা
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি আর বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্বস্তির কারণে অশোধিত তেলের দাম প্রতিনিয়ত কমছে৷ এতে অনেকে লাভবান হলেও বিপদে পড়ছে কেউ কেউ৷
দাম শুধু কমছেই
তেলের দাম কমতে থাকায় নরওয়েও রক্ষা পাচ্ছে না৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি গত কয়েকবছরে তার অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটিয়েছে নর্থ সি থেকে তেল তুলে৷ কিন্তু তেলের দাম কমতে থাকায় দেশটির নীতিনির্ধারকরা ভাবনায় পড়ে গেছেন৷ এখন তারা চিন্তা করছেন তেল তোলার চেয়ে মৎস খাতকে সমৃদ্ধ করা লাভজনক কিনা৷
দ্বিগুণ বিপদ
পশ্চিমাদের নানাবিধ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে এমনিতেই বিপদে আছে রাশিয়া৷ তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে তেলের মূল্যহ্রাসের জটিলতা৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে গতবছর রাশিয়ার মুদ্রা রুবেলে ডলারের বিপরীতে ব্যাপক গুরুত্ব হারিয়েছে৷ দেশটিতে বেতনও কমানো হয়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর আর্থিকভাবে আরো অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে রাশিয়া৷
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
নাইজেরিয়া হচ্ছে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ৷ ক্ষমতায় আসার আগেই দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু বুহারি ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকারের খরচ আরো বাড়াবেন তিনি৷ কিন্তু তেলের দাম কমায় সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷
নতুন বাস্তবতা
নাইজেরিয়া একমাত্র দেশ নয় যেটি তেলের মূল্য যখন বেশি ছিল তখনকার ভিত্তিতে চলতি বছরের বাজেট নির্ধারণ করেছিল৷ এখন তেলের দাম কমায় বাজেটে তাই বিস্তর ফারাক সৃষ্টি হচ্ছে৷ ২০১৪ সালের মধ্যভাগের তুলনায় বর্তমানে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ৷ বিশেষজ্ঞরা এখন যৌক্তিকভাবেই ধরে নিচ্ছেন, তেলের দাম শীঘ্রই আবার বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
নিষেধাজ্ঞা লাঘবের পর
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ইরান এখন তেলের উৎপাদন আরো অনেক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে৷ এর ফলে তেলের দাম ভবিষ্যতে আরো কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ তবে দেশটি তেলের ব্যাপক মূল্যহ্রাসের জন্য সৌদি আরবকে দায়ী করছে৷
কম দেয়া, বেশি নেয়া
মার্কিন ফ্র্যাকিং ইন্ডাস্ট্রি এবং ইরানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল রপ্তানির পরিমাণ কমানোর আহ্বান নাকচ করে দিয়েছে সৌদি আরব৷ তবে তেলের দাম ব্যাপক হারে কমায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশটিও এখন বিপাকে পড়ছে৷ দেশটি ব্যাপক বাজেট ঘাটতির শিকার হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷
ভেনিজুয়েলায় পরিবর্তনের হাওয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেলের মজুদ রয়েছে ভেনেজুয়েলার কাছে৷ দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকার তেল বিক্রি থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে এতকাল জনগণের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনা করেছে৷ কিন্তু এখন দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে তেলের দাম কমে যাওয়ায়৷
এখন কী হবে?
বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে তেলের দাম কমায় সেদেশের ফ্র্যাকিং ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ লোকসানের দিকে আগাচ্ছে৷ গাড়ি চালকদের জন্য অবশ্য তেলের কম দাম আনন্দের৷ এই আনন্দে বড় বড় গাড়ি বিক্রি বাড়ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷