তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে দূষণমুক্ত করতে নতুন প্রযুক্তি
১৫ অক্টোবর ২০২৪চিলের আটাকামা মরুভূমিতে সেরো দোমিনাদোর নামের টাওয়ারের উপর ১০,৬০০ আয়না সূর্যের আলো নিক্ষেপ করছে৷ সেই আলো প্রায় দশ হাজার সূর্যের শক্তির সমান৷
সোলার প্যানেলের বদলে আয়না সূর্যের আলো একত্র করে গলানো লবণ উত্তপ্ত করছে৷ পাম্পের সাহায্যে সেই মিশ্রণ টাওয়ারের উপরে পাঠানো হয়৷ তাপমাত্রা ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছুঁতে পারে৷
এই প্রণালীর বৈশিষ্ট্য হলো. লবণ সেই উত্তাপ ধারণ করতে পারে এবং এভাবে টাওয়ারের নীচে টার্বাইনগুলির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে৷ এমনকি আকাশে সূর্যের আলো না থাকলেও সেই প্রক্রিয়া চলতে পারে৷ সেরো দোমিনাদোরের প্রতিনিধি ইবান আবেইয়া বলেন, ‘‘এটা এমন এক প্রযুক্তি, যার সাহায্যে আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য জ্বালানি ধারণ করতে পারি৷ দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন সেই শক্তি কাজে লাগাতে পারি৷ সেই প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা বিশেষ করে গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে পারি৷''
পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানির একমাত্র সুবিধাও তরল লবণ কেড়ে নিতে পারে৷ গ্যাস ও কয়লার মতো সেটিও স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য জ্বালানির উৎস, যা প্রকৃতির অস্থিরতায় ভারসাম্য আনতে পারে৷
লবণের মিশ্রণের অনুপাতের উপর সেই সাফল্য নির্ভর করে৷ আন্তোফাগাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গবেষকরা এখনো আদর্শ মিশ্রণ তৈরির লক্ষ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ স্টোরেজ ক্ষমতার আরো উন্নতি করাই তাঁদের লক্ষ্য৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মাউরো এনরিকেস বলেন. ‘‘বর্তমানে এমন এক মিশ্রণ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাকে সোলার সল্ট বলা হয়৷ তার মধ্যে সোডিয়াম নাইট্রেট এবং পটাসিয়াম নাইট্রেট রয়েছে৷ উত্তাপ সঞ্চয়ের জন্য সেটি উপযুক্ত৷ সৌর শক্তি না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা জুড়ে সেই লবণ শক্তির জোগান দিতে পারে৷''
গ্রিন এনার্জি এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিক গুরুত্বহীন অঞ্চলকেও সোনার খনিতে রূপান্তরিত করতে পারে৷ এমনকি বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যেও পরিবর্তন আনতে পারে৷
অনাড়ম্বর এক কন্টেইনার চিলেকে গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছতে সাহায্য করতে পারে৷ ছোট হলেও এটাই বিশ্বের একমাত্র ভ্রাম্যমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র৷ সেই পরীক্ষামূলক কেন্দ্রটিকে মরুভূমির মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বড় কারখানার জন্য আদর্শ জায়গার সন্ধান চালানো হচ্ছে৷ সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গার সন্ধান চলছে৷ সিসিটেম প্রকল্পের প্রধান লিন্ডলে ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘‘আমাদের প্রধান কাজ হলো এমন এক মানচিত্র তৈরি করা, যার মধ্যে উচ্চ মানের দক্ষতাসম্পন্ন হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত থাকবে৷ সেখানে এমন জোন আঁকা থাকবে, যার মধ্যে হাইড্রোজেনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিশেষভাবে কার্যকর হবে৷''
পানি ভেঙে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন তৈরি করতে হলে শুধু অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয় না৷ সব জায়গায় বাতাস ও পানি মোটেই একই রকমের নয়৷ ম্যাক্সওয়েল মনে করিয়ে দেন, যে বাতাসের চাপ, তাপমাত্রা ও জলবায়ু পরিস্থিতি সেই প্রক্রিয়ার দক্ষতার উপর প্রভাব রাখে৷
চিলেতে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুতের সিংহভাগ কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসে৷ ভবিষ্যতে কয়লা ছাড়াই সেগুলি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ আন্তোফাগাস্তার উত্তরে আনগামোস-এ প্রথমবার এমন এক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে লবণ দিয়ে চালানোর উপযুক্ত করে তোলার কাজ চলছে৷ গ্রিনার ক্যাপাসিটি সংস্থার কর্ণধার হোয়াকিন মেলেন্দেস বলেন, ‘‘এটা গোটা বিশ্বের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আদর্শ৷ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রূপান্তরের পরেও কনট্রোল রুম, টার্বাইন, জেনারেটর আগের মতোই কাজে লাগানো হয়৷ সেটাই এই প্রকল্পের বড় সুবিধা৷''
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী তরল লবণের কল্যাণে ভবিষ্যতেও একই টার্বাইন চালু থাকবে৷ সৌরশক্তি সেই লবণকে দিনের বেলায় উত্তপ্ত করবে৷ এমন রূপান্তরকে বিপ্লব বলা চলে, গোটা বিশ্বের উপর যার প্রভাব পড়বে৷ এইএস আন্দেসের ম্যানেজার বানি বোজ্জো বলেন, ‘‘সেটা সত্যি চললে ভবিষ্যতে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে৷ শুধু প্রযুক্তির নিরিখে দেখলে যে কোনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লবণচালিত কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে৷''
তবে চিলের পরিবেশ বাকি বিশ্বের সঙ্গে হুবহু মেলেনা৷ তা সত্ত্বেও সেখানে নতুন করে ভাবনার যে প্রক্রিয়া চলছে, তার ফলে বিশাল মাত্রায় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, প্রযুক্তিগত সমাধানসূত্র এবং অবশ্যই বিনিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার বাইরেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য৷
ক্রিস্টফ ব়্যোকেরাট/এসবি