তরুণ প্রজন্মের হ্যাকিং প্রীতি ও সাইবার আইন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮কি এই হ্যাকিং? জানতে আমরা কথা বলেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপনের কাছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, হ্যাকিং হচ্ছে কারো অনুমতি না নিয়ে তাঁর রিসোর্স এক্সেস করা৷ কাজটা করা হয় নেটওয়ার্কের উপর দিয়ে৷
অনেকেই হ্যাকারদেরকে বুদ্ধিমান চোরও বলে থাকে৷ কারণ তারা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কিং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বেশ ভালোভাবেই জানে বলে তারা সহজেই খুঁজে বের করতে পারে একটি সিস্টেমের দুর্বল পথগুলো৷ আর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা ওই পথ দিয়েই ঢুকে পড়ে অন্যের সার্ভারে৷ একটি সার্ভারে প্রবেশ করে তার অ্যাডমিনিসট্রেটিভ ক্ষমতা হাতে নেওয়া মানেই ঐ সার্ভারের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা হাতে পাওয়া৷ এভাবেই তারা অন্য ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হ্যাকিং বেশ সহজ বলেই মনে করছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা৷ এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে দুর্বল বা কম নিরাপত্তাসম্পন্ন ওয়েবসাইট তৈরিকে৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের আইএসপি বিডিকম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ সাবের বলেন, আমাদের এখানে যেসব ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে তার বেশিরভাগই কিছু কমন ওপেনসোর্স ইউটিলিটি দিয়ে তৈরি৷ এসব সফটওয়্যারে কিছু সিকিউরিটি গ্যাপ আছে, যা অনেকেই জানে৷ এসব ওয়েবসাইটের যেসব ওয়েব মাষ্টার আছে তারা যদি এসব সিকিউরিটি গ্যাপ প্রতিরোধক প্যাচ ব্যবহার করে তাহলে কিন্তু সহজে আর এসব সাইট হ্যাক করা যাবে না৷ কিন্তু ওয়েব মাষ্টারদের অজ্ঞতার জন্যেই কিছু মানুষ হ্যাকিং এর সুযোগ নিচ্ছে৷
তবে হ্যাকাররা কিন্তু ধরাছোয়ার বাইরে থাকা কোন গোষ্ঠী নয়৷ যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি শাহী মির্জার কাছ থেকে৷ ছোট পরিসরে হলেও রেবের ওয়েবসাইট হ্যাক করে শাহী মির্জা ধরা পড়েছে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে৷ বিশেষ করে নবীন হ্যাকারদের ক্ষেত্রে ধরা পড়ার ঘটনা বেশ দ্রুতই ঘটে যায়৷ কারণ আমরা যখন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করি তখন প্রত্যেকটি সংযোগের পেছনেই কাজ করে একটি করে নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস৷ অর্থ্যাত্ যখনই আপনি ইন্টারনেটে সংযুক্ত হচ্ছেন তখন এই আইপি এড্রেসের মাধ্যমে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত আপনি৷ তাই ওই নেটওয়ার্কের পথ ধরে আপনাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব৷ আর হ্যাকারদের প্রধান হাতিয়ারই হলো ইন্টারনেট৷ তাই তারাও এই বিশেষ নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে নয়৷ ফলত তারাও ধরা পড়ে যায় নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞদের হাতে৷ তবে শুধু আইপিই নয়, আরো অনেকভাবে খুঁজে বের করা যায় হ্যাকারদের৷ দেশভেদে সেই প্রক্রিয়াও একেক রকম৷
কিন্তু হ্যাকারদের ধরা মানেই কি গ্রেফতার বা অর্থদন্ড৷ উন্নত বিশ্বে বোধহয় গ্রেফতার বা অর্থ দন্ডের বিষয়টি এত সহজ নয়৷ অন্তত কেভিন মিটনিখ-এর বিষয়টি তাই বলে৷ কেভিন মিটনিখ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যাকার৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝির দিকে কেভিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক হ্যাক করেছেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে৷ মার্কিন মিডিয়ার মতে, একটিমাত্র ডিজিটাল টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে পেন্টাগনের নেটওয়ার্ক হ্যাক ও সেখান থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের ইচ্ছামত যেকোন জায়গায় নিক্ষেপের ক্ষমতা রাখে কেভিন৷ এতটাই শক্তিশালী হ্যাকার সে৷ তথাপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু কেভিনকে ব্যবহার করতে পেরেছে নিজেদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার কাজে৷ কিভাবে? জানতে চেয়েছিলাম জাকারিয়া স্বপনের কাছে, কেভিনের মতো এতোবড় হ্যাকারকেও কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমাবস্থায় শাস্তি দেয়নি৷ তাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে, তাকে নেটওয়ার্ক সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এরপর তাকে শাস্তি হিসেবে ২১ বছর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে দুরে থাকতে বলা হয়েছে৷ তবে কেভিনকে কিন্তু কোন জেল-জরিমানা করা হয়নি৷
হ্যাকারদের কাছ থেকে নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখতে নিয়মিতই চলছে গবেষণা৷ অরিজিন্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করলে তা অনেকটাই হ্যাকারমুক্ত রাখা সম্ভব৷ তার উপর হ্যাকারদের আটকানোর জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বেশ তত্পর৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ অনলাইন নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে হলে ভালোভাবে ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাতেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অনলাইন সিকিউরিটি টিম তৈরি করতে হবে৷ এই টিমকে কাজ করতে হবে অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে৷ আর এভাবেই বাংলাদেশে নিরাপদ অনলাইন জগত তৈরি করা সম্ভব৷ আর সেটা বেশ জরুরি৷ কারণ অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও চালু হতে পারে অনলাইন নির্ভর কেনাকাটা, বাণিজ্য৷ আর তখন নিরাপদ নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হবে সবচেয়ে বেশি৷