1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তফসিল সংলাপের পথে কোনো বাধা নয়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ নভেম্বর ২০২৩

১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷ অন্যদিকে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনল্ড লুর সংলাপের আহ্বান পৌঁছে গেছে তিন দলের কাছে৷ এক্ষেত্রে তফসিল কি সংলাপের পথে কোনো বাধা হতে পারে?

https://p.dw.com/p/4YuQw
Bangladesch Dhaka Polizei und BGB  vor Wahlkommission
ছবি: Mortuza Rashed/DW

নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও সংলাপের পথে তা কোনো বাধা হতে পারে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷ সব দল  আন্তরিকভাবে সমস্যার সমাধান চাইলে এখনও সংলাপ হতে পারে বলে মত তাদের৷

তফসিল কি সংলাপের পথে বাধা?
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম মনে করেন, "নির্বাচনের তফসিল সংলাপের পথে কোনো বধা নয়৷ তফসিল স্থগিত হতে পারে, বাতিল হতে পারে, রিসিডিউল হতে পারে৷'' উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন পিছিয়েছে৷ ২০০৬ সালে ঘোষিত তফসিল বাতিল করে দিয়ে পরে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছে৷ বাতিল, স্থগিত ও পিছানো সব ধরনের উদাহরণই আছে৷
তিনি বলেন, "নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র৷ পারস্পরিক সহাবস্থান, যথাযথ নির্বাচনী পরিবেশ-এগুলো না থাকলে তা গণতন্ত্র হয় না৷ তখন সেটা হয় ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার নির্বাচন৷”

অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবিরের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ থাকবে৷ কোনো ভাবে  নির্বাচন করে ফেললেই চাপ চলে যাবে তা নয়৷ বিতর্কিত নির্বাচন করলে তখন তাদের কাছে তার নথি থাকবে, যা চাপ বাড়াতে তারা কাজে লাগাবে৷

‘সংলাপে আওয়ামী লীগের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নাই’

তিনি বলেন,"তফসিল ঘোষণা হলেও কোনো অসুবিধা নেই৷ সংলাপ করা যায় এবং সেটা করা উচিত৷ যদি সমঝোতা ছাড়া একতরফা নির্বাচন হয় তা দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো হবে না৷”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে৷ তবে এর ব্যতিক্রম হতে পারে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক৷ তিনি বলেন, "সুষ্ঠু ও অংশগ্রণমূলক নির্বাচনের জন্য যদি এর ব্যত্যয় ঘটাতে হয় তাহলে সেটা করা সম্ভব৷ অতীতে নজির আছে৷ সুপ্রিম কোর্টেরও রেফারেন্স নেয়া যায়৷ আসল কথা হলো দেশের ও দেশের মানুষের কল্যণে যেকোনো কিছুই করা যায়৷ তাতে সংবিধান বাধা হয় না৷''

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সংলাপের কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন প্রশ্নে বিশেষত নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে৷ কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷ ৷''

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম  প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংলাপের আহ্বানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সমঝোতা হলে বড় বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে৷ তাহলে নির্বাচন কমিশনেরও সাফল্য অনেক বৃদ্ধি পাবে৷
আওয়ামী লীগ বিএনপির অবস্থান
বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের  তিনবার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন৷ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বুধবার সচিবালয়ে দেশটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর শর্তহীন সংলাপ বিষয়ক চিঠি হস্তান্তর করেন ওবায়দুল কাদেরর কাছে৷ বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শুনেছি, এমন দুটি চিঠি আরও দুটি দলের কাছে দেয়া হয়েছে৷ তাদের একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি৷ এই চিঠিতে শর্তহীন রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ রয়েছে৷ তবে সংলাপের এখন আর সেই সুযোগ নেই৷''

Bangladesch Dhaka Polizei und BGB  vor Wahlkommission
ছবি: Mortuza Rashed/DW

একই দিন সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আবারো সংলাপের বিষয় নাকচ করে দেন তিনি৷ বলেন, "তারা (বিএনপি) নির্বাচনী ট্রেনে না উঠলে কিছু করার নেই৷ নির্বাচনের ট্রেন তো কারো জন্য অপেক্ষা করবে না৷” বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন,  "সংলাপের সময় এখন আর অবশিষ্ট নেই৷ গতকালও (বুধবার) এটা আমি বলেছি৷ মিস্টার লু-এর চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি৷ সেই চিঠির জবাব দুই একদিনের মধ্যে দেব৷ এটা একটা সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারের বিষয়৷ তিনি একটা চিঠি দিয়েছেন, সেটার জবাব আমরা অবশ্যই দেবো৷ এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে৷ চিঠি প্রসঙ্গে আমাদের কথা এটাই৷”

এর জবাবে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশররফ হোসেন বলেন," আমরা সব সময়ই সংলাপ চাই৷ সরকারই সংলাপ চায় না৷ সরকার যদি নীতিগতভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তাহলেই সংলাপ হতে পারে৷ সরকার সংলাপের পথ বন্ধ করে রেখেছে৷ বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে৷ কার সঙ্গে সংলাপ হবে? আজকে বিএনপি অফিসের সামনে তালা আর আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে ভূরিভোজ৷”

অন্যদিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, "সংলাপে আওয়ামী লীগের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নাই৷ ২০১৪ সালে তো খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে সংলাপ হয়েছে৷ ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিক সংলাপ হয়েছে গণভবনে৷ উনি (শেখ হাসিনা) কথা দিয়েছিলেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের৷ সেটা তো হয়নি৷”

তারপরও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মত দেন তিনি৷  এজন্য প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এমন শর্ত তাদের৷

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিল হয়েছে তাই সংলাপ করা যাবে না এটা কোনো কথা নয়৷ এটা কোনো বাধা নয়৷ বাধা হলো অন্তরের নেতিবাচক ইচ্ছা৷ আমরা বলছি মুক্ত মন নিয়ে সংলাপের আয়োজন করতে হবে৷ সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷ এটা সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে৷ আটক নেতা-কর্মীদের জেলখানা থেকে মুক্তি দিতে হবে৷ তাহলে সংলাপের আংশিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে৷”

এদিকে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি চলার মধ্যেই তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার ভোর থেকে ও মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি৷ একই কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ৷