ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারের বেশি আসন কমছে
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম ড. মাকসুদ কামাল জানিয়েছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই আসন কমবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট আসন রয়েছে সাত হাজারের বেশি৷ এখন সেই আসন গিয়ে দাঁড়াবে ছয় হাজারের নিচে৷ শিক্ষার মানোন্নয়নে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি৷
আসন কমানোর সুপারিশ করেছে ভর্তি কমিটি৷ ভর্তি কমিটির সদস্য এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির জানান, ‘‘সিট কমানো বলা ঠিক হবে না৷ এটা র্যাশনালাইজ করা হয়েছে৷ অবকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং এই সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে৷ অনেক বিষয় আছে যেখানে ছাত্র বেশি নেয়া দরকার সেখানে আমরা সিট বাড়িয়েছি৷ আবার অনেক বিষয়ে কমানো দরকার সেখানে আমরা কমিয়েছি৷ এটা করতে গিয়ে কিছু আসন কমছে৷ তবে এর উদ্দেশ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা৷ বেকার তৈরি করা শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে না৷’’
এছাড়া বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাও আর থাকছে না৷ ফলে কেউ চাইলে এক বিভাগে পড়াশুনা করে অন্য বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন না৷
আর ২০১৪ সাল থেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা যে বছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করবেন সেই বছরই তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে৷ কেউ কোনো কারণে ভর্তি পরীক্ষা না দিতে পারলে তার পরের বছর তা আর দিতে পারবেন না৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এখন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ ধীরে ধীরে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও একই নীতি অনুসরণ করতে পারে বলে আশঙ্কায় আছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা৷
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগের দাবিতে তারা এখন নানা কর্মসূচি দিচ্ছেন৷ তারা আরো বড় আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার কথাও জানান৷ তারা বলেন, ‘‘এটা শিক্ষা সংকোচন নীতি৷ বিশ্ববিদ্যালয় তো বাড়তি আসন দিচ্ছে না৷ তাহলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিতে অসুবিধা কোথায়? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের যোগান দিতেই এই নিয়ম করা হচ্ছে৷’’
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্বিতীয়বার সুযোগ দিলে একটা অসম প্রতিযোগিতা হয়, এত বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মত অবকাঠামো নেই, অনেকে প্রথমবার ভর্তি হয়ে হলে থাকে ক্লাস করে না দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পছন্দের বিষয় পাওয়ার জন্য আর তাদের বিরুদ্ধে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগও আছে৷
এর জবাবে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মো. রাফি হাসান বলেন, ‘‘অসদুপায় যে কেউ অবলম্বন করতে পারে৷ এটা প্রথমবার যারা পরীক্ষা দেন তারাও করতে পারেন৷ এটা দেখা বা প্রতিরোধের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের৷ আর অবকাঠামোর সমস্যা এখন নেই৷ এখন সব বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘‘পশ্চিমা বিশ্বের কোথাও এভাবে ভর্তি পরীক্ষা না দিতে দেয়ার নজির নেই৷ এটা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কমানো ছাড়া আর কিছুই না৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাতটি কলেজের বোঝা মাথায় নিয়েছে৷ আবার বেশ কয়েকটি বিষয়ে ইভিনিং কোর্স চালাচ্ছে৷ মূল কাজ বাদ দিয়ে এই বোঝা কেন তারা নিচ্ছে? আমি মনে করি এখন নতুন নতুন বিষয় খোলা দরকার৷ কিছু বিষয়ে ছাত্র কম নেয়া যেতে পারে৷ কিন্তু তাই বলে মোট আসন কমানো যৌক্তিক নয়৷ আর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বন্ধ না করে শিক্ষার দুয়ার অবারিত করা দরকার৷’’
তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০জন শিক্ষক, ৮৪৭জন শিক্ষার্থী এবং তিনটি আবাসিক হল নিয়ে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিলো৷ এখন ১৩টি অনুষদ, ৮৪টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, এক হাজার ৯৮৬ জন শিক্ষক এবং ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী৷ ১৯টি আবাসিক হল ও চারটি হোস্টেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত সঠিক হওয়া প্রয়োজন৷ প্রয়োজন পর্যাপ্ত অবকাঠামো৷ কিন্তু শুধু আসন কমিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়৷ আমরা দেখছি মানোন্নয়নের আর কোনো উদ্যোগ নেই৷ তাই মানোন্নয়নের জন্য শুধু আসন কমানো প্রশ্ন তৈরি করে৷’’
আর বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকা উচিত৷ তবে প্রয়োজনে কিছু শর্ত আরোপ করা যেতে পারে৷ যেমন একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না দেয়া৷ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিলে কিছু নাম্বার কমিয়ে সমতা বিধান করা ইত্যাদি৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার অনার্সে ভর্তি হলে মাস্টার্স শেষ করে বের হওয়া যায়৷ কিন্তু আমি মনে করি মাস্টার্সে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা থাকা উচিত৷ যাতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করা ছাত্ররা এখানে মাস্টার্স করার সুযোগ পান৷’’