ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে গণ প্রত্যাবাসন
১১ আগস্ট ২০২৪যদিও দলের অনেকেই এই ধরনের বার্তায় অপ্রস্তুত হয়েছেন৷ এই যেমন, টেক্সাসের রিপাবলিকান কর্মী লাওরেন বি. পেলা৷ তিনি বললেন, কনভেশনে ট্রাম্পের গণ প্রত্যাবাসনের কথা এবং সেইসঙ্গে কিছু শব্দ যেমন ‘অবৈধ' এবং ‘অনুধিকার প্রবেশ' শুনে অস্বস্তি লাগছিল৷
তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প আসলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা সব পরিবারকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন না৷ গণ প্রত্যাবাসন বলতে তিনি অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর কথাই বলছেন৷''
কিন্তু মনে হচ্ছে ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টাদের পরিকল্পনা ভিন্ন৷ নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে গণ প্রত্যাবাসনের ইস্যুটিকে রেখে তারা হয়তো ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নেওয়া প্রত্যাবাসন নীতিকে অনুসরণ করতে চান৷ ‘অপারেশন ওয়েটব্যাক' শীর্ষক ওই নীতিকে অনেকে ‘বর্ণবাদী দোষযুক্ত' বলে থাকেন৷
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প৷ প্রত্যাবাসন করতে তিনি দেশটির ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তা নেবেন এবং প্রয়োজনে তিনি দেশটির সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেবেন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোট অভিবাসীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি৷ ধারণা করা হয় এর একটা বড় অংশের দেশটিতে থাকার স্থায়ী আইনি কাগজ নেই৷
অভিবাসীদের বিষয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনতা অনুমান করা যায় তার এক সহকারী স্টেফান মিলারের কথায়৷ স্টেফান মিলার দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে ক্ষমতায় গেলে হোয়াট হাউসে একটি সিনিয়র পদে নিযুক্ত হতে পারেন তিনি৷
মিলারের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন (ক্ষমতায় আসলে) দুটি কাজ করতে পারে৷ একটি হলো সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া৷ আরেকটি হলো অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো৷
এটি করতে হলে, ট্রাম্পকে তার আগে ক্ষমতায় এসে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আবার কার্যকর করতে হবে৷ মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ তাছাড়া তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তায় ব্যাপক অভিযান চালাতে পারেন৷ আটক করে অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি ক্যাম্পে রাখতে পারেন এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগেই তাদের প্রত্যাবসনের জন্য বিমানে উঠিয়ে দিতে পারেন৷ তাছাড়া দেশটির ১২৫ বছরের পুরোনো নিয়ম, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার সে অধিকারও বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প৷
ডেমোক্র্যাটরা বলছে, অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের এই ভাবনা ও প্রচারণা লাটিনো ভোটারদের কাছে টানতে পারে৷
দক্ষিণ টেক্সাসে একটি বড় অংশে ল্যাটিনো অ্যামেরিকারদের বাস৷ সেখারকার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি ভিসেন্তো গঞ্জালেজ বলেন, ভোটারেরা সীমান্তে আরো ভালো ব্যাবস্থাপনা দেখতে চায়৷
উপযুক্ত নীতি অবলম্ব করে অনেক কিছুই করা যেতে পারে৷ তার কথায়, এর ফলে হয়তো সীমান্তে অভিবাসীদের আগমন কমে আসবে৷ কিন্তু গণ প্রত্যাবাসন ঘটনা হবে হৃদয়বিদারক৷
এদিকে হিসপানিক ভোটরদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম নয়৷ ২০০২ সালে সেই ভোটারদের ৩৫ ভাগ পেয়েছিলেন ট্রাম্প৷
তবে তারপরও অনেকেই এমন প্রচারণায় একমত নন৷ নিজেকে বহুজাতির হিসপানিক পরিচয় দেওয়া পেলা বলেন, বর্তমান সরকারের অনেক নীতিই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়ক নয়৷ তিনি জানান, তার রিপাবলিকান সহকর্মীরা যখন এ বিষয়ে আলোচনা করে, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শিশুদেরকে স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না৷ সেটা বেশ কষ্টকর৷
তিনি বলেন, ‘‘একজন হিসপানিকের কাছে এটা খুব অস্বস্তিকর একটি ইস্যু৷ আমার মনে হয় আমাদের এই লোকগুলোকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত৷''
উইসকনসিনের হিস্পানিক চেম্বার অফ কমার্সের সিইও জর্জ ফ্রাঙ্কো বলেন, ‘‘উইসকনসিনের দুগ্ধ ও কৃষি খাতে সবচেয়ে কঠিন কাজ করা ৭৫ হাজারের বেশি অভিবাসী যদি আগামীকাল চলে যায়, তাহলে স্টেটের অর্থনীতি থমকে যাবে৷''
এদিকে, ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন যে ট্রাম্পের হুমকি এখন লাতিনো ভোটারদের অনুপ্রাণিত করছে৷
ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসকে সমর্থনকারী একটি নেতৃস্থানীয় ভোটার নিবন্ধন সংস্থা ভোটো লাতিনোর সিইও মারিয়া তেরেসা কুমার বলেছেন, ‘‘গণ নির্বাসন অনেককে উচ্চ সতর্কতার মধ্যে রেখেছে৷''
হ্যারিসের সঙ্গে জোটবদ্ধ অন্যান্য গ্রুপের মতো, ভোটো লাতিনো ডেমোক্র্যাটিক টিকিটের শীর্ষে উঠে আসার পর থেকে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে দেখেছে৷ কুমার বলেছিলেন, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এ কথা ঘোষণার পর থেকে সংস্থাটিপ্রায় ৩৬ হাজার ভোটার নিবন্ধিত করেছে৷
টেক্সাসের দক্ষিণ প্রান্তে লাতিনো অধ্যুষিত জেলায় ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি ভিসেন্তে গঞ্জালেজ বলেন, ভোটাররা সীমান্তে আরো ভাল ব্যবস্থাপনা দেখতে চায়, কিন্তু একই সময়ে, অনেকেরই এমন বন্ধু বা পরিবারের সদস্য রয়েছে যাদের ঠিকমতো অভিবাসন নথিপত্র নেই৷ তার কথায়, ‘‘ভাল নীতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে, যা সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে৷ কিন্তু গণ নির্বাসন মানুষের কাছে তীব্র যন্ত্রণার৷''
আরআর/আরকেসি (রয়টার্স)