টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রস্তুতিহীন ভারত
১৫ জুন ২০২১করোনার কারণে আইপিএল মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটাররা আবার মাঠে নামবেন। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। ভারতে মাঝখানের সময়টুকুতে করোনার প্রবল প্রকোপ ছিল। ফলে ঘরোয়াভাবেও ম্যাচ খেলতে পারেননি ক্রিকেটাররা। ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ১৪ দিন তারা কোয়ারান্টিনে থেকেছেন। এই দিন তিনেক হলো, তারা মাঠে গিয়ে প্র্যাকটিস করছেন। আর প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে টিম করে খেলছেন।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলেছে। দুইটি টেস্টে তারা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে। ব্যাটসম্যান, বোলাররা ফর্মে আছেন। এমনকী উইলিয়ামস রান না পেলেও টিমের জিততে কোনো অসুবিধা হয়নি। ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংল্যান্ডকে এভাবে হারিয়ে দেয়াই প্রমাণ করছে, তারা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুত।
ফলে ফাইনাল হবে, একদিকে প্রস্তুতিহীন ভারত বনাম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতে খেলতে নামা আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় থাকা নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। যাদের ম্যাচ প্র্যাকটিস হয়ে গেছে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অন্যতম স্তম্ভ চেতেশ্বর পূজারা স্বীকার করে নিয়েছেন, নিউজিল্যান্ড প্রস্তুতির দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে আছে। ভারতীয় বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পূজারা বলেছেন, ''ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুটো টেস্ট খেলে ফাইনালে নামছে নিউজিল্যান্ড। ফলে ওরা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। তাই একটু বেশি সুবিধা ওরা পাবে।'' তবে তিনি বলেছেন, ''ভারতীয় দলের সকলে নিজের সেরাটা দিতে তৈরি। ভারতের জেতার ক্ষমতা আছে।''
পূজারা কেবল টেস্ট ক্রিকেটই খেলেন। তাই তিনি বলেছেন, ''এই ফাইনাল আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলেই নিজেদের নিংড়ে দেবে ফাইনালে।''
নিউজিল্যান্ডের বোলিং বিভাগ খুবই শক্তিশালী। বোল্ট, সাউদি, ওয়াগনারের পেস ও সুইং খেলতে হবে প্রস্তুতিহীন ভারতীয় ক্রিকেটারদের। কাজটা কঠিন। অজিঙ্ক রাহানে জানিয়েছেন, তারা ওই পেস খেলার জন্য ভালোরকম প্রস্তুতি নিয়েছেন। বোর্ডের ওয়াবসাইটে তিনি বলেছেন, ''শরীরের খুব কাছ থেকে বল খেলতে হবে। ইংল্যান্ডে খেলাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটাররা সেই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করেন।'' তার মন্ত্র হলো, সোজা ব্যাটে খেলো এবং শেষ পর্যন্ত বল দেখে খেল।
ভারতের পেস বোলিংও হেলাফেলার নয়। বুমরা তো আছেনই। তার সঙ্গে আছেন সামি, সিরাজ এবং ইশান্ত শর্মা। বিরাট কোহলি একদিন আগেই সিরাজ ও ইশান্তের সঙ্গে সেলফি তুলে বলেছেন, ''এই ফাস্ট বোলাররা প্রত্যেক দিন দাপট দেখাচ্ছে।'' আর বুমরার বক্তব্য, ''প্রত্যেকেই প্র্যাকটিস ম্যাচের শেষে ফুরফুরে মেজাজে আছে।''
মঙ্গলবার নিয়ে পরপর চারদিন ভারতীয় ক্রিকেটাররা টিম করে খেলেছেন। সেখানে ঋষভ পন্থ যেমন ব্যাটে রান পেয়েছেন, তেমনই ঋদ্ধিমান সাহাও রীতিমতো ভালো ব্যাট করেছেন। কোহলি, পূজারা, রাহানেরা তো ভালো খেলছেনই।
কিন্তু ফাইনালে প্রস্তুতি না থাকাই কি কাল হয়ে দাঁড়াবে ভারতের? আনন্দবাজারের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক এবং লেখক রূপক সাহা মনে করেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ভারতীয় প্লেয়ারদের ফিটনেস লেভেল ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তারা মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। আর তারা জয়ের জন্য ঝাঁপান।''
রূপক সাহা মনে করেন, ''ভারতে যেহেতু একই পজিশনে প্রচুর ভালো প্লেয়ার আছে, তাই প্রতিটি প্লেয়ার সচেতন। শারীরিকভাবে ফিট। তারা জানেন, ভালো খেলতে না পারলে, তারা সুযোগ পাবেন না। অন্যরা তার স্থান দখল করে নেবে।'' তার মতে, ''একটা খেলায় যে কোনো ফলই হতে পারে। কিন্তু এই ছেলেগুলোর পারফরমেন্স খুবই ভালো। করোনার জন্য ভারতীয় বোর্ডের কিছু করারও ছিল না।'' তাই রূপক সাহার বিশ্বাস, চিন্তা করার কিছু নেই।
সূত্র জানাচ্ছে, বোর্ডের সত্যি কোনো উপায় ছিল না। করোনা তাদের সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় টিম যে খেলতে পারছে সেটাই বড় কথা। না হলে সবসময়ই টেস্টের আগে ভারতীয় দল প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে। কোয়ারান্টিনে না থাকলে এবারও খেলত। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতা ও কোহলির নেতৃত্বে টিম স্পিরিট এতটাই বেশি যে, ভারতীয় বোর্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, অনুরাগীরা জয় ছাড়া আর কিছু ভাবছেন না। তবে তারা এটাও মানছেন, এই পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রস্তুতি খুবই জরুরি ছিল।