টিকিট, না সম্মান, কীসের আশায় দলত্যাগ?
২২ মার্চ ২০২১মেদিনীপুরের প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শিশির অধিকারী যখন অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, ক্ষিপ্ত তৃণমূল নেত্রী তখন বলছিলেন, দলেই রাখা হতো না ওনাদের৷ অর্থাৎ শিশির এবং শুভেন্দু অধিকারী৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জির দুই বিশ্বস্ত সৈনিক৷ তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে যারা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যাদের কেউ কেউ এবার বিজেপির টিকিটে ভোটেও লড়বেন, তারা নাকি এবার তৃণমূলের টিকিট পেতেন না৷ নেত্রী নানা কারণে তাদের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ এমনটাই রাজনৈতিক মহলের খবর ছিল৷ ফলে তাঁরা আগেভাগেই দল ছাড়েন৷ আবার এমন কেউ কেউ আছেন, যারা দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা অবধি অপেক্ষা করেছিলেন৷ টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা দল বদলেছেন৷ এখন অবশ্য তারা বলছেন, ভোটের টিকিট নয়, দলে প্রাপ্য সম্মান জুটছিল না বলেই দল ছেড়েছেন৷ নতুন দলে প্রার্থীপদ না পেলেও প্রচারে থাকবেন৷
যেমন হাওড়ার ডাকসাইটে নেতা জটু লাহিড়ি৷ তিনি এবং হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী, তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট এবার শিবির বদলে বিজেপিতে৷ রথীনবাবু টিকিট পেয়েছেন, জটু লাহিড়ি পাননি৷ তবু তার দাবি, বিজেপির প্রচারে তাকে পাওয়া যাবে৷ কিন্তু পুরনো দল ছেড়ে যাওয়ার পর এখন কি আক্ষেপ হচ্ছে না? ডয়চে ভেলেকে তিনি সাফ বললেন, ‘‘না না, কোনও আক্ষেপ নেই আমার৷ আমি বিজেপিতে গিয়ে বলেছি, টিকিট দিলেও আমি থাকব, না দিলেও থাকব৷ আমার কোনও দুঃখ নেই৷ কারণ, যারা অসভ্যতা করে, তাদের সঙ্গে আমি থাকি না৷ টিকিটের কোনও প্রশ্নই নেই৷ কোনও শর্ত নেই আমার৷''
আর যিনি একদা মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠতম সহযোগী ছিলেন, বহু মিছিলে, বহু জনসভায়, অনশন-মঞ্চে যাকে নেত্রীর পাশে দেখা যেতই, সেই সোনালী গুহ এখন কী বলছেন? অভিমান, না ক্ষোভ, কীসের তাড়না তাকে দল ছাড়তে বাধ্য করল? এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে সোনালী বললেন, ‘‘ক্ষোভ নয়, অভিমান৷' তা হলে সেই অভিমান কাটিয়ে কি আবার পুরনো দলে ফিরবেন? কারণ নতুন দলও তো তাকে টিকিট দিল না৷ সিদ্ধান্ত কি পুনর্বিবেচনা করবেন? সোনালীর অভিমানী মন্তব্য, ‘‘পুনর্বিবেচনা তো তার (মমতা) করার কথা ছিল৷ আমি চার বারের এমএলএ৷ হেরে তো যাইনি৷ আমার বাড়িতে সিবিআই রেডও হয়নি৷ (তৃণমূলের) প্রার্থী তালিকায় এমন অনেকে আছেন, যারা সিবিআই-এর কেস খাওয়া এবং সিবিআই তাদের তলব করেছে৷''
ক্ষোভ হোক বা অভিমান, দলত্যাগীদের ব্যাপারে কিন্তু অত্যন্ত কঠোর মনোভাব নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি৷ দু'দিন আগেই নন্দীগ্রামে তার চ্যালেঞ্জার, বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে বলেছেন, বাংলায় মীরজাফররা কখনও সরকার গড়ে না৷ এই বিশ্বাসঘাতকদের যে আর কখনও দলে ফেরাবেন না, তৃণমূল নেত্রীর কথায় এবং কাজেই সেটা এখন স্পষ্ট৷