ডিএনএ বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা
২৭ নভেম্বর ২০১৭হাইডেলব্যার্গের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক জার্মানির বৃহত্তম হাসপাতালগুলির মধ্যে পড়ে৷ প্রফেসর স্টেফান ফিস্টার এই হাসপাতালে পেডিয়াট্রিসিয়ান ও মলিকিউলার বায়োলজিস্ট হিসেবে কাজ করেন৷ তিনি শিশুদের মস্তিষ্কের টিউমার চিকিৎসার স্পেশালিস্ট৷
পাঁচ বছর আগে কেরিমের মাথায় একটি বিরল টিউমার ধরা পড়ে৷ টিউমারটি ব্রেনস্টেম বা মস্তিষ্কের মূল অংশের কাছে থাকায়, অপারেশন করে তা পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু যেটুকু কেটে বের করা গেছে, তা পরীক্ষা করে উত্তরোত্তর চিকিৎসার পন্থা নির্ধারণ করার চেষ্টা চলছে৷ অনকোলজিস্ট প্রফেসর স্টেফান ফিস্টার বললেন, ‘‘আমরা টিউমারের জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ঠিক কোথায় বিশেষ মিউটেশান বা পরিবর্তনটা ঘটেছে৷’’
গবেষকরা এযাবৎ ৬০০ ব্রেন টিউমারের জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে ঠিক কোথায় নির্দিষ্ট পরিবর্তন বা মিউটেশান ঘটেছে, তা নির্ধারণ করতে পেরেছেন৷ এর ফলে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে সংশ্লিষ্ট জিনটিকে রুখে দেওয়া সম্ভব, যার দরুণ টিউমারটি আর বাড়তে পারবে না৷ প্রফেসর ফিস্টার জানালেন, ‘‘আমরা টিউমারের ডিএনএ-র ৪০০ কোটি উপাদানের সব ক'টিকে নিয়ে তা রোগীর ডিএনএ-র সঙ্গে তুলনা করেছি৷ তার ফলে আমরা জানতে পেরেছি, টিউমারে কোথায় মিউটেশান বা পরিবর্তন ঘটেছে; কাজেই ঠিক সেখানেই চিকিৎসা চালানো সম্ভব হয়েছে৷’’
বিভিন্ন টিউমারের একক পরিবর্তনগুলোর হদিশ পাবার ফলে স্টেফান ফিস্টার ও তাঁর সতীর্থরা প্রত্যেক রোগীর জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসা পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারেন৷ টিউমার কিভাবে বাড়তে পারে, তা জানা থাকার ফলে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রে ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারেন৷
টিউমার কোথায় দুর্বল, তা ধরতে পারলে...
যে সব শিশুদের টিউমার বিশেষভাবে আগ্রাসী, তাদের ট্রিটমেন্ট গোড়া থেকেই তীব্রতর করা যেতে পারে৷ অপরদিকে যে সব পেশেন্টের ঝুঁকি কম, তাদের ক্ষেত্রে একটু নরম ট্রিটমেন্ট বেছে নেওয়া যেতে পারে, কারণ তার সাইড এফেক্টস বা আনুষঙ্গিক উপসর্গ অনেক কম৷ প্রফেসর ফিস্টার বললেন, ‘‘আমরা টিউমারে এমন কাঠামো খুঁজি, যা শরীরের অন্য কোনো কোষে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ এর ফলে সাইড এফেক্টস ছাড়াই সেই সব কাঠামোগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়৷ টিউমারটা কোথায় দুর্বল, সেটা আমরা খুঁজে বের করি৷’’
শিশুদের দু'ধরণের টিউমারের ক্ষেত্রে গবেষকরা জেনেটিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির কল্যাণে পরিকল্পিতভাবে সম্পূর্ণ নতুন ওষুধ প্রয়োগ করতে পেরেছেন৷ কেরিমও এই আবিষ্কার থেকে উপকৃত হয়েছে: তার টিউমার আর বাড়েনি৷ প্রফেসর ফিস্টার জানালেন, ‘‘টিউমার যদি বাড়তেও থাকে, তাহলেও একটা নতুন ওষুধ বেরিয়েছে, যা শুধু টিউমারের মিউটেশান বা পরিবর্তনটাকেই আক্রমণ করবে, শরীরের সাধারণ কোষগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না৷’’
শিশুদের মস্তিষ্কের টিউমার দেখা দিলে, ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই তা সারানো সম্ভব৷ বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকদের স্বপ্ন হল, ভবিষ্যতে কেমোথেরাপি বা রে ট্রিটমেন্ট ছাড়াই টিউমারের চিকিৎসা করা, যা'তে চিকিৎসার আনুষঙ্গিক নেতিবাচক ফলশ্রুতি আরো কম হবে৷