1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাটাকে 'সিঙ্গুর-ক্ষতিপূরণ' দেওয়ার নির্দেশ রাজ্যকে

৩১ অক্টোবর ২০২৩

ট্রাইবুনালের নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। টাটা নির্দেশ নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

https://p.dw.com/p/4YDoO
সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা
সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভাছবি: UNI

সিঙ্গুর নিয়ে আবার বড়সড় ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে গঠিত আরবিট্রাল আদালত জানিয়ে দিয়েছে, টাটা মোটরসকে ৭৬৫ দশমিক সাত আট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১১ শতাংশ করে সুদও দিতে হবে ওই টাকার উপর। যার অর্থ, যতদিন রাজ্য সরকার টাটাকে পুরো টাকা না দিচ্ছে, ততদিন ওই সুদ দিতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। এছাড়াও মামলার খরচ বাবদ এক কোটি টাকা দিতে হবে টাটা গোষ্ঠীকে।

ট্রাইবুনালের এই রায়ের পরে টাটার তরফে যেমন বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে তৃণমূলের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্যই আজ রাজ্যকে এই চাপের মুখে পড়তে হলো। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, প্রথম দিন থেকেই সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সমস্যা চলছে। এর দায় সিপিএম এবং তৃণমূল দুই তরফকেই যৌথভাবে নিতে হবে।

২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীকে এক হাজার একর জমি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশ আমলের জমি অধিগ্রহণ আইন মেনে ১০০ শতাংশ কৃষকের সম্মতি ছাড়াই ওই জমি টাটা গোষ্ঠীকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টাটা ওই জমিতে ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তৎকালীন রাজ্য সরকারকে। অতি বাম সংগঠনগুলি এবং তৃণমূল সিঙ্গুরে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। বার বার টাটার কাজ বিঘ্নিত হয়। তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনশন আন্দোলন শুরু করেন। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। পালাবদলের ইঙ্গিতও স্পষ্ট হয়।

আবার টাটার হাতে এয়ার ইন্ডিয়া

এই পরিস্থিতিতে ২০১১ সালে রতন টাটা জানিয়ে দেন, সিঙ্গুর ছেড়ে টাটা গোষ্ঠী চলে যাবে। সেখানে কারখানা তৈরির পরিবেশ নেই। ২০১১ সালেই রাজ্যে সরকারের বদল হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল নতুন সরকার গঠন করে। তৃণমূল জানিয়ে দেয়, তারা সিঙ্গুরের চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেবে। টাটার কাছে সেই প্রস্তাব দেওয়া হলে টাটা জানায়, জমির দাম এবং কারাখানা তৈরির প্রাথমিক যে খরচ টাটা করেছিল, তা রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

বস্তুত, এই বিষয়টি নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছিল। তিন সদস্যের আরবিট্রাল ট্রাইবুনালে মামলা চলছিল। সোমবার ট্রাইবুনাল জানিয়েছে, টাটাকে ৭৬৫ দশমিক সাত আট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একই সঙ্গে ১১ শতাংশ হারে সুদ এবং মামলার টাকা দিতে হবে। বস্তুত, টাটা গোষ্ঠী ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জকে বিবৃতি দিয়ে ট্রাইবুনালের রায় জানিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের অবশ্য এনিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার রাস্তা খোলা আছে।

ডয়চে ভেলে এবিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা এখনই এবিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিনের রায় নিয়ে তৃণমূলকে এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ''রাজ্যে শিল্প স্থাপনের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, তৃণমূল তা আগেই ধ্বংস করেছে। তাদের সরকারের অপদার্থতায় এবার রাজ্যকে এই বিপুল ক্ষতিপূরণের মধ্যে পড়তে হলো।'' সেলিমের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ধারদেনা করে চলছে। এবার এই টাকাও মেটাতে হবে। এই ঘটনার জন্য বিজেপিকেও দায়ী করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ওই সময় আন্দোলন চলাকালীন তৃণমূলের পাশে একাধিক বিজেপি নেতাকেও দেখা গেছিল। ফলে দায় তারাও এড়াতে পারেন না।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ''আমরা শিল্পের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তৎকালীন সরকার জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তার বিরোধিতা করেছিলাম আমরা। কারখানা তৈরি শুরু হওয়ার পর তৃণমূলের জমি ফেরানোর সিদ্ধান্তকেও আমরা সমর্থন করিনি। মুখ্যমন্ত্রী ওই জমিতে সর্ষে বীজ ছড়িয়েছিলেন। এখন রাজ্যের মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।''

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সংগঠন ফিকির সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা অঞ্জন রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি আগেই কফিনে ঢুকে গেছিল। এবার কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়ে গেল।'' তার মতে, যে কোনো অন্যায়ের শাস্তি পেতেই হয়। টাটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে যে অন্যায় হয়েছিল, এটা তার শাস্তি। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন তিনি। 

এদিকে সিঙ্গুরের একাংশের জমি ইতিমধ্যেই কৃষকদের ফেরত দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই জমিতে ফসল হচ্ছে না বলেই অভিযোগ সিঙ্গুরের একাংশের মানুষের। চাষের জন্য ওই জমি নষ্ট হয়ে গেছে বলে তাদের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও একাধিকবার বিতর্ক হয়েছে।