জার্মানির পানি কি সিসামুক্ত?
৫ ডিসেম্বর ২০১৩এই আইন অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা থাকতে পারবে না৷ এজন্য বন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের কাজকর্ম এখন বেড়ে গেছে৷ উদ্বিগ্ন বাড়ির মালিক, ভাড়াটে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হচ্ছে তাঁদের৷
সিসার কারণে বিষক্রিয়া
সিসার পরিমাণ মাত্রা অতিক্রম করলে স্নায়ু ও রক্তে বিষক্রিয়া হয়৷ বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে পড়ে গর্ভস্থ শিশু ও ছোট বাচ্চারা৷ বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, সিসা মিশ্রিত পানি পান করলে বাচ্চাদের বুদ্ধির বিকাশে বাধা পড়ে৷ শ্রবণ শক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷ অল্পবয়সি মেয়েদেরও এই ধাতু মিশ্রিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিজ্ঞানীরা৷ সিসা দেহে জমা হয়ে থাকে৷ গর্ভাবস্থায় এটি সচল হয়ে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করতে পারে৷
সহজে বাঁকানো যায় বলে সেই ২০০০ বছর আগে থেকেই পাইপ তৈরির কাজে সিসার ব্যবহার চলে আসছে৷ তখন থেকেই এই ধাতুর ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে জানা গেছে৷ কিন্তু তবুও জার্মানিতে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পানীয় জলের লাইন ও পাইপে সিসা ব্যবহার করা হয়েছে৷
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চল এগিয়ে আছে
তবে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলে ১০০ বছরেরও আগে সিসা দিয়ে পানির পাইপ তৈরি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ অন্যদিকে জার্মানির উত্তরাঞ্চলে ৭০-এর দশকেও নতুন লাইন তৈরিতে এই ধাতু কাজে লাগানো হয়েছে৷ খাদ্যদ্রব্যের রসায়নবিদ ফ্যার্বার জানান, ‘‘খুব অল্প পরিমাণ সিসাও নির্ধারিত বিপদসীমা অতিক্রম করার পক্ষে যথেষ্ট৷''
১০ বছর আগে প্রতি লিটার পানিতে সিসার মাত্রা ২৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত থাকা যাবে বলে আইন করা হয়৷ সেসময় অনেক বাড়ির মালিক সিসার লাইন বদলে ফেলেন৷ তবে অনেকেই অপেক্ষা করেন৷ কেননা সেই সময় পানিতে সিসা থাকার নির্ধারিত পরিমাণটা তাদের আয়ত্তের মধ্যেই ছিল৷ কিন্তু এখন এই বিপদসীমা ১০ মাইক্রোগামে নিয়ে আসায় তাদের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই৷ নতুন এই মাত্রা নির্ধারণে সিসা দিয়ে তৈরি পানির পাইপগুলি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেল৷
আইন অনুযায়ী, পয়লা ডিসেম্বরের পরও সিসা নির্মিত পানির পাইপ ব্যবহার করলে বাড়িওয়ালাদের অবশ্যই ভাড়াটের এর ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে হবে৷ সিসার পাইপগুলি বদলানোর ব্যাপারেও উদ্যোগ নিতে হবে তাদের৷ এই কাজটা না হওয়া পর্যন্ত সন্তান-সম্ভবা ও ছোট বাচ্চাদের কলের পানি পান না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এর বদলে বোতলের পানি দিয়েই কাজ চালাতে পারেন এই জনগোষ্ঠী৷
পুরানো বাড়িগুলিতে সমস্যা বেশি
উল্লেখ্য বন অঞ্চলে পুরানো বাড়িগুলির মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশেরই রয়েছে সিসা সমস্যা, জানান পানীয়জল বিশেষজ্ঞ ফ্যার্বার৷ এই বছর চার হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছেন তিনি৷ হামবুর্গে ৫০ হাজার বাসিন্দা নিয়মিত এমন পানি পান করছে, যাতে সিসার পরিমাণ আইন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি, জানিয়েছে ভোক্তারক্ষা সংগঠনগুলি৷ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্যোগের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷