জার্মানিতে করোনা পরীক্ষার নামে দুর্নীতি
৩১ মে ২০২১করোনা সংকটের মোকাবিলা করতে যত বেশি সম্ভব মানুষের করোনা টেস্ট বড় হাতিয়ার৷ এভাবে প্রকৃত চিত্র উঠে এলে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়ে পড়ে৷ জার্মানিতে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক হারে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ মার্চ মাস থেকে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ৷ প্রাথমিক এই পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া না গেলে মানুষ সেই ফলাফল দেখিয়ে দোকানবাজার, রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন৷ দেশজুড়ে এমন টেস্টের সুযোগ করে দিতে সরকার বেশ উদারতার পরিচয় দিয়ে অসংখ্য বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষা করার অনুমোদন দিয়েছে এবং টেস্টের ব্যয় পুরোপুরি বহন করছে৷ সেই সুযোগে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মোটা টাকা কামিয়ে নিচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে৷
এমন মারাত্মক অভিযোগের ফলে সরকার নড়েচড়ে বসেছে৷ শনিবারই তদন্ত শুরু হয়েছে৷ নানা ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে৷ যেমন কোলন শহরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে বাস্তবে ৭০ জনের করোনা পরীক্ষা হলেও এক হাজার পরীক্ষার জন্য সরকারি ভরতুকি নেওয়া হয়েছে৷ সরকার জনপ্রতি ১৮ ইউরো দেওয়ার ফলে এভাবে বিশাল অংকের মুনাফা করছে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান৷ তাছা়ড়া দ্রুত প্রশিক্ষণসহ একাধিক কারণে অনেক কেন্দ্রে ঠিকমতো পরীক্ষাও হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে৷ সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের শিকার হলেও কোনো ব্যক্তি নেগেটিভ করোনা পরীক্ষা হাতে পেতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
এমন প্রেক্ষাপটে করোনা টেস্ট সেন্টারগুলির উপর আরও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ বাড়ছে৷ বিচার মন্ত্রণালয়ের মতে, হিসাবপত্রের উপর নজর রেখে সম্ভাব্য দুর্নীতি চিহ্নিত করতে হবে৷ বাণিজ্যিক প্রতারণার জন্য দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বলে মনে করিয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পানের মতে, বেশিরভাগ করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ম মেনে কাজ করছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন৷
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের উপর চাপ বেড়েই চলেছে৷ ফলে সোমবার ফেডারেল ও ১৬টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা সে বিষয়ে আলোচনা করছেন৷ করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো এবং টেস্টের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ প্রতারণা করতে গিয়ে ধরা পড়লে কড়া শাস্তির হুমকি দিচ্ছে সরকার৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও কর দফতরকেও নজরদারির কাজে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷
সার্বিকভাবে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার কমে চলেছে৷ ফলে অনেক জায়গায় করোনা টেস্ট ছাড়াই দোকানবাজার ইত্যাদি স্থাপনায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ৷ অন্যদিকে করোনা টিকার দুটি ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যাও ধীরে হলেও বাড়ছে৷ ফলে তাদের ক্ষেত্রেও করোনা টেস্টের প্রয়োজন হচ্ছে না৷ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির প্রয়োজন আপাতত কমে যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)