জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ
১ আগস্ট ২০১৩সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম চালু করলে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসবে নিবন্ধন নেয়৷ কিন্তু জামায়াতের এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হাইকোর্টে রিট করেন ২০০৯ সালে৷ আদালত তখন নির্বাচন কমিশন ও জামায়াতের বিরুদ্ধে রুল জারি করে৷ সেই রিটে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়, এ কথা ডয়চে ভেলেকে জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ কারণ, জামায়াত জনগণের সার্বভৌমত্ব মানে না, জামায়াতের শীর্ষ পদে নারীরা আসীন হতে পারেন না৷ আর সব ধর্মের মানুষ জামায়াতের রাজনীতি করতে পারেন না৷
এই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয় গত ১২ই জুন৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন৷ রায়ে বলা হয়, জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল৷
রায়ের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রজ্জাক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন যে, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ আর সেজন্য রায়ের কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ এতে জামায়াতের রাজনীতির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়কে কিনা – এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব''৷
এদিকে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মহসীন রশিদ বলেছেন, এই রায়ের ফলে কার্যত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলো৷ এই দলের প্রতীক দাড়িপাল্লা নিয়ে আর কেউ নির্বাচন করতে পারবে না৷ আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন৷
ওদিকে ১৪ দলের পক্ষে এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আদালতের এই রায়ে আবারো প্রমাণিত হলো যে জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন৷ তাঁর আশা, আদালতের রায়ের আলোকে নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিষিদ্ধের ব্যবস্থা নেবে৷
জামায়াতের অন্যতম মিত্র বিএনপি তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ তবে বিএনপি নেতা গায়েম্বর চন্দ্র রায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বাড়বে৷
১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে জামায়াতকে চতুর্থবারের মতো নিষিদ্ধ করার পথ প্রশস্ত হলো৷ তবে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে৷ কারণ রায়ের পর জামায়াতের নিবন্ধন যদি নির্বাচন কমিশন বাতিল করে তাহলেই কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে না৷ শুধুমাত্র একটি অনিবন্ধিত দলে পরিণত হবে৷ অর্থাৎ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না৷
আদালতের রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা হয়েছে৷ তাই জামায়াতের অতীত এবং বর্তমান সন্ত্রাসী কাজ বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও সরকার এতটা সাহসী হবে বলে আশা করেন না তিনি৷ কারণ জামায়াতের শক্তি আছে, জোট আছে, ভোট আছে৷ মুনতাসির মামুনের কথায়, জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল৷ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে তা বলাও হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷ সম্ভব জামায়াতের বিচার করা৷