পরাগায়নে নতুন দিশার খোঁজ
৩ ডিসেম্বর ২০১৯কোন খাদ্য সুস্বাদু, মৌমাছি তা ঠিক বোঝে৷ কিন্তু গাছপালাই আবার সেই খোরাক স্থির করে দেয়৷ প্রথমে এককভাবে সেই কাজ করলেও এক ধরনের মধুর সাহায্যে গাছ স্থির করে দেয়, কোন পোকা পরাগায়ন করবে, কোনটি তা করবে না৷
গাছের নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো এক সময়ে সম্ভবত তা বদলে যায়৷ ভুপার্টাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারট্রুড লোহাউস তা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তিনি উদ্ভিদজাত নেকটার ও উদ্ভিদের রক্ত বলে পরিচিত ফ্লোয়েম রস বিশেষজ্ঞ৷ সেই রক্তই নেকটারের ভিত্তি৷ ঠিক কীভাবে এবং কোন পরিবেশে শর্করা ও অ্যামিনো অ্যাসিডের মিশ্রণ গাছের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে চান তিনি৷ কারণ গাছের রস শুধু নেকটারের স্বাদ ও কোন পোকার সেই স্বাদ পছন্দ হবে সেটাই স্থির করে না, সেইসঙ্গে গাছের বেঁচে থাকার ক্ষমতাও নির্ধারণ করে৷
তবে সেই পদার্থ উদ্ভিদ থেকে বার করা বেশ কঠিন৷ সেটাই হলো সমস্যা৷ সেই কাজে সাহায্য করতে পারে অ্যাফিড বা জাবপোকা৷ তবে সব পাতার উপর এই পোকা পাওয়া যায় না৷ সেই পোকা ধরা কিন্তু এমন কিছু কঠিন নয়৷ লোহাউস বলেন, ‘‘ছোট খাঁচা ও একটি ব্রাশ থাকলেই হবে৷ খুব সাবধানে জাবপোকা ধরে খাঁচায় পুরতে হয়৷ কিছু পোকা ব্রাশেই লেগে থাকে৷’’
বলা বাহুল্য, পোকাগুলি একটু ঘাবড়ে গেছে৷ বন্দি পোকা নতুন একটি পাতা পেয়েছে৷ তারপর মাইক্রোস্কোপের নীচে সেগুলি পর্যবেক্ষণ করার পালা৷ জায়গা ও পাতা অনুযায়ী উদ্ভিদের রসের গঠনে পার্থক্য দেখা যায়৷
উদ্ভিদের মধ্যে ঠিক কী ঘটছে, তা বুঝতে কোষের ভিতরের দৃশ্যের সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হয়৷ কিন্তু সে কাজ বেশ কঠিন, কারণ শুধু হাতে গোনা কয়েকটি কোষেই শর্করা প্রবেশ করে৷ কিন্তু ঠিক কোনগুলিতে? এদিকে অনুসন্ধানের সময় পাতা মুড়লেও চলবে না৷ গ্যারট্রুড লোহাউস মনে করিয়ে দেন, ‘‘অর্থাৎ আমি এই পাতা মুড়লে নিরানব্বই শতাংশ কোষ পাবো৷ কিন্তু যে এক শতাংশের উপাদান জানতে চাই, সেগুলি পাবো না৷’’
সেই সমস্যার সমাধান করতেই জাবপোকা কাজে লাগতে পারে৷ এই পোকা বুঝতে পারে, ঠিক কোন কোষে ফ্লোয়েম রস রয়েছে৷ তারপর সেখানে শুঁড় ঢুকিয়ে রস শুষে নেয়৷ কিন্তু সেই গুণই তার কাল হয়েছে৷ কারণ মাইক্রোস্কোপের মধ্যে লেজার রয়েছে৷ পোকা কোষ থেকে রস শুষে নেবার সময় গ্যারট্রুড বোতাম টিপে সেটির শুঁড় কেটে নেন৷
ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম নল দিয়ে তিনি কাটা শুঁড় থেকে রস বার করে নেন৷ সেই রসই উদ্ভিদের তৈরি নেকটারের ভিত্তি৷ গ্যারট্রুড লোহাউস বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘পরাগ বহনকারী হিসেবে মৌমাছি রয়েছে৷ এমনকি বাদুড় বা পাখিও সে কাজ করে৷ মৌলিক গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশ্ন হলো, ফুলের মধ্যে ঠিক কী আনা হয়? এবং নেকটার তৈরি করতে গাছের হাতে এনজাইম সংক্রান্ত কোন ক্ষমতা রয়েছে কি?’’
উদ্ভিদের কোষের রসে কৃত্রিমভাবে রদবদল করতে পারলে ফুল হয়তো অন্যান্য পরাগ বহনকারীদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে৷ তখন বাইরের পরিবেশ বদলে গেলেও গাছ হয়তো আরও সহজে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে৷
সে ক্ষেত্রে শুধু মানুষ ও পরাগ বহনকারীরা সন্তুষ্ট হবে না৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জাবপোকারাও তাদের খোরাক পাবে৷
মাল্টে লিন্ডে/এসবি
মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...