1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপত্তা সংকট কেন বাড়ছে?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশে গুলশান হামলা প্রমাণ করলো যে, জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করলে নিরপত্তা সংকট কমে না, বরং বাড়ে৷ আইএস নেই বললেই তার তৎপরতা বন্ধ হয় না, বরং তারা আরো শক্তি সঞ্চয় করে৷

https://p.dw.com/p/1JHxK
নিরপত্তা সংকট কমে না...
ছবি: Reuters/M. Hossain Opu

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করে, তাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে জঙ্গিদের আক্রমণ বন্ধ করা যায় না৷ এতদিন বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে 'টার্গেট কিলিং'৷ মুক্তমনা, ব্লগার, প্রকাশক, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, পুরোহিত, যাজক বা এলজিবিটি গ্রুপের সদস্যদের হত্যা৷ আর এবার দেখল জিম্মি করে ২০ জন বিদেশিকে হত্যা৷ তবে আইএসপিআর ২০ জন বললেও এখনো অনেকে নিখোঁজ বলে জানা যাচ্ছে৷ তাই প্রকৃত নিহতের সংখ্যা এখনই বেঁধে দেয়া যাচ্ছে না৷

এই হামলাকারীরা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে শুক্রবার রাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তেই প্রবেশ করে৷ তারা দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ফোল্ডেড বার এক-২২ পিস্তল ব্যবহার করে৷ অথচ পুলিশ অদক্ষতার কারণে বিষয়টি বুঝতে না পেরে প্রথমে মামুলি অভিযান চালায়৷ ফলাফল - অচিরেই ফুরিয়ে যায় গুলি, শুরুতেই নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা৷ আইএসপিআর বলছে, শনিবার সকালে চূড়ান্ত কমান্ডো অভিযানের আগেই রাতে ২০ জন বিদেশিকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ তাই প্রশ্ন থেকে যায়, অভিযান পরিকল্পনায় ১২ ঘণ্টা সময় নিয়ে কী লাভ হলো?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালেও ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতায় মোট নিহতের সংখ্যা জানাননি৷ শুধু বলেছেন, ছয়জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, ধরা পড়েছে একজন৷ ১০ ঘণ্টায় জিম্মি নাটকের অবসান ঘটে৷ আর সেই অবসান যে রক্তাক্ত অবসান, তা জানা গেল এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই, আইএসপিআর-এর ব্রিফিংয়ে৷ জানা গেল, অভিযানের আগেই ২০ জনকে গলা কেটে হত্যার খবর৷

বাংলাদেশে গলাকেটে হত্যার এই ঘটনা ঘটে আসছে ২০১১ সাল থেকে৷ কিন্তু সরকার এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে পাশ কাটিয়েছে এতকাল৷ এছাড়া তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার দায় স্বীকারকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে৷

গুলশানের এই জিম্মি ঘটনার পর এবারও আইএস দায় স্বীকার করে এবং ২৪ জনকে হত্যার কথা জানায়। দেখা যায়, নিহতের সংখ্যা আইএস-এর দাবির সঙ্গে প্রায় মিলে যাচ্ছে৷ এমনকি পুরোও মিলতে পারে৷ কারণ ২০ জনের বাইরে আরো কয়েকটি পরিবার তাঁদের পরিবারের সদস্য নিহত হওয়ার দাবি করছেন৷

শুক্রবার, এই জিম্মি ঘটনার আগে, ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করা হয় বাংলাদেশে৷ এরপর শনিবার সকালেও সাতক্ষীরায় আরেক পুরোহিতকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপতালে চিকিৎসাধীন৷ গত একমাসে চারজন পুরোহিততে হত্যা করা হয়েছে৷ অব্যাহত আছে হত্যার হুমকিও৷

হারুন উর রশীদ স্বপন
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপনছবি: Harun Ur Rashid Swapan

সরকার প্রকৃত ঘটনা বার বার আড়াল করায় বাংলাদেশে গেয়েন্দা নেটওয়ার্কও অনেক দুর্বল৷ তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য আছে কিনা, সন্দেহ রয়েছে তা নিয়েও৷ এর আগে ঢাকা ও রংপুরে দু'জন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল৷ অথচ তারপরও কোনো কার্যকর নিরপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়েনি৷ গুলশানের ঐ স্প্যানিশ বেকারিটিতে প্রধানত বিদেশিরাই মূলত যাতায়ত করতেন৷ জঙ্গিরা সেটা জানলেও গোয়েন্দাদের কাছে সম্ভবত সেই তথ্য ছিল না৷ থাকলে যেখানে বিদেশিদের আনাগোনা, সেরকম কূটনৈতিক এলাকায় একটি বেকারি বা রেস্টুরেন্ট এভাবে অরক্ষিত থাকে কীভাবে?

বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই এখন প্রশ্নের মুখে৷ সাধারণ নাগরিক, সংখ্যালঘু, মুক্তমনা, ব্লগার, বিদেশি নাগরিক - সকলেই যেন টার্গেট৷ কারুরই যেন নিরাপত্তা নেই৷ আর যাঁরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে চান, তাঁরা কিন্তু ঠিকই থাকেন নিরাপত্তাবেষ্টনীতে৷

বাংলাদেশে আইএস-এর কাজ বাড়াতে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে তিনমাস আগে৷ মে মাসে আইএস এক ভিডিও বার্তায় রমজানে তাদের হামলা বড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিল৷ তাদের পরিকল্পনায় বাংলাদেশও ছিল৷ এখন বোঝা গেল, তারা তাদের ছক অনুযায়ীই এগোচ্ছে৷ কিন্তু বিপরীতে বাংলাদেশ তার নিরপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে একেবারে ঢিলে ঢালা৷ তাই যা হবার তাই হয়েছে৷

রাজধানীতে এমন এক হামলায় আপনার প্রতিক্রিযা কী? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান