জঙ্গিদের পিঠে গুলি
২৮ জুলাই ২০১৬পুলিশের কথায়, ‘‘এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ চারদিক থেকে অভিযান হয়েছে৷ শুধু পিছনে নয় বুক, মাথা বা শরীরের অন্য জায়গাও গুলি লেগেছে৷''
মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিং-এ পুলিশের অভিযানে ন'জন জঙ্গি নিহত হওয়ার পর, বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তাদের লাশ নেয়া হয়৷ পরদিন বুধবার, বেলা দু'টোর মধ্যে শেষ হয় ময়নাতদন্ত৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বুধবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘নিহত ন'জনের প্রত্যেকের শরীরে সাত থেকে আটটি গুলির ক্ষত আছে৷ নিহতদের মাথায়, বুকে, পিঠে, হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে৷ আর অধিকাংশের গুলিই লেগেছে পেছন থেকে৷''
এই ন'জনের দেহ থেকে মোট সাতটি গুলি উদ্ধার করেছে ময়নাতদন্তকারী দল৷ এর তিনটিই ছিল একজনের দেহে৷ এর বাইরে একজনের দেহে দু'টি এবং অন্য দুই জঙ্গির দেহ থেকে একটি করে মোট দু'টি গুলি উদ্ধার করা হয়৷ তবে ন'টি মৃতদেহের মধ্যে ক'টার পেছন দিকে গুলি লেগেছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি চিকিৎসকেরা৷
চিকিৎসকরা জানান, তাঁরা মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা রেখেছেন৷ চুল, পায়ের পেশির কিছুটা অংশ, পাকস্থলী, কিডনি ও যকৃতের অংশবিশেষও সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ এছাড়া ডোপ টেস্টের জন্য মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হবে৷ এই ন'জন কোনো বিশেষ ড্রাগে আসক্ত ছিল কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা৷
তবে এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ডয়চে ভেলের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী এবং মানবাধিকার নেতৃ নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মতে যারা নিহত হয়েছে, তারা যে জঙ্গি এটা নিয়ে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নাই৷
তবে অভিযান নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে৷ বিশেষ করে যদি অভিযানের সময় গোলগুলি হয়, তাহলে নিহত অধিকাংশের পিছনে গুলি বিদ্ধ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়৷ তবে এখনো অমরা অনেক কিছু জানি না৷ আশা করি পুলিশ বিষয়গুলো স্পষ্ট করবে৷''
ওদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান চিকিৎসক সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন৷ তিনি শুধু পিঠে গুলি লাগার কথা বলেননি, বুকে এবং মাথাসহ শরীরের অন্যান্য জায়গাও গুলি লাগার কথা বলেছেন৷ সুতরাং পিঠে গুলি লাগার ঘটনা নিয়ে কোনো আনুমানিক ধারণা বা প্রশ্ন তোলার তেমন কোনো সুযোগ নেই৷''
তিনি জানান, ‘‘জঙ্গিরা চারটি কক্ষে অবস্থান নিয়েছিল৷ তাদের বিভিন্ন দিক থেকে গুলি করা হয়৷ সেয়াট টিম সব দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়৷ তাই গুলি তাদের শরীরে যে কোনো দিক থেকেই লাগতে পারে৷''
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আমরা পাইনি৷ পেলে আরো বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে৷''
প্রসঙ্গত, ঢাকার কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিংয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে এক ঘণ্টার অভিযান স্টর্ম ২৬-এর সময় নয়'জন নিহত ও একজন আহত হয়৷ অভিযান প্রস্তুতি অবশ্য রাতভর চলে৷ পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক অভিযানের পর জানান যে, নিহতরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্য৷ তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল এবং গুলশান হামলাকারী গ্রুপেরই সদস্য ছিল বলেও জানান তিনি৷
বন্ধু, জঙ্গিদের পিঠে গুলির আপনাদের কাছে কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷