গির্জার জানালায় কাঁচের পেইন্টিং
শিল্পপ্রেমীদের জন্যও তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে গির্জা। শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসনের আগেও গেরহার্ড রিখটার থেকে শুরু করে মার্ক চাগাল, সমসাময়িক শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরেই গির্জার জানালা সাজিয়ে যাচ্ছেন শিল্পকর্মে।
গ্রাইফসভাল্ড ক্যাথিড্রাল
শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসন গ্রাইফসভাল্ড ক্যাথিড্রালের পূর্ব দিকের জানালাটিকে নতুন করে ডিজাইন করেছেন। শহরটি জার্মান রোমান্টিক চিত্রশিল্পী কাসপার ডেভিড ফ্রিডরিশের জন্মস্থান। কাঁচের এই ডিজাইন ফ্রিডরিশের কাজের রঙের ধরনকেই মনে করিয়ে দেয়। আয়নাগুলো দিন ভর জানালা দিয়ে সূর্যের আলোর ভেতরে আসা নিশ্চিত করে।
ঠোলে অ্যাবে
গেরহার্ড রিখটার জার্মানির প্রাচীনতম অ্যাবের তিনটি জানালার নকশা করেছেন৷ এই প্যাটার্ন তৈরির জন্য এই শিল্পী ১৯৯০ সালের একটি বিমূর্ত ছবিকে ছোট ছোট টুকরোতে ভাগ করেছেন। এই টুকরোগুলোতে ক্যালিডোস্কোপিক প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মানির প্রাচীনতম মঠের সন্ন্যাসীরা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কাঁচের ডিজাইনের কাজটি উদ্বোধনের পর শিল্পপ্রেমী তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানান।
কোলন ক্যাথিড্রাল
২০০৭ সালের ২৩ আগস্টের পর থেকে জার্মানিতে আসা পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় স্থান থেকে কোলন ক্যাথিড্রাল পরিণত হয়েছে আধুনিক শিল্পের তীর্থস্থানেও। ক্যাথিড্রালের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত গেরহার্ড রিখটারের ডিজাইন করা জানালা উন্মোচন করা হয়েছিল। এই জানালায় ৭২টি রঙে রাঙানো প্রায় ১১ হাজার ৫০০টি বর্গাকারের কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে।
সেন্ট অ্যান্ড্রু চার্চ, কোলন
চিত্রশিল্পী মার্কুস ল্যুপের্ৎস ২০০৫ সালে কোলনের সেন্ট অ্যান্ড্রুর রোমানেস্ক চার্চের জানালায় কাঁচের ডিজাইন করেন। গির্জার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি স্বর্ণমন্দিরের চারপাশে অবস্থিত ১২টি জানালায় তিনি কাঁচের ডিজাইন করেন। অন্যান্য অনেক গির্জার মতো এই গির্জার মূল জানালাগুলোও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়েছিল।
রাইমস ক্যাথিড্রাল
মিনিমাল আর্টের ভুবনে জার্মানির অন্যতম প্রতিনিধি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ইমি ক্নোবেল ফরাসি ক্যাথিড্রালে একটি 'সম্প্রীতির জানালা' তৈরি করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গির্জা জার্মানদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০১৫ সালে ক্নোবেলের ডিজাইন করা কাঁচের জানালা উদ্বোধন করা হয়। সীসার ফ্রেমের মধ্যে রঙিন জ্যামিতিক ডিজাইন সাজিয়ে এই চমৎকার ডিজাইন তৈরি করেছেন তিনি।
সেন্ট মারিয়া চার্চ, ক্যোঠেন
সাক্সনি-আনহাল্টের একটি ছোট শহর ক্যোঠেনের ক্যাথলিক চার্চের জন্য ২০১৫ সালে কাঁচের জানালা ডিজাইন করেন লাইপজিশের শিল্পী মাইকেল ট্রিগেল। অ্যাডাম এবং ইভের গল্পকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই জানালার ডিজাইনে। ট্রাইগেলের নকশায় দেখা যায়, শিশু যিশু মা মারিয়ার কোলে বসে আছেন।
নাউমবুর্গ ক্যাথিড্রাল
নিউ লাইপজিশ স্কুলের সবচেয়ে পরিচিত শিল্পী নিও রাউশ তার ডিজাইন করা জানালায় থুরিঙ্গিয়ার সেইন্ট এলিজাবেথের জীবনের তিনটি মুহূর্ত চিত্রিত করেছেন। প্রথম জানালায় দেখা যাচ্ছে যুবতী এলিজাবেথ তার স্বামী চতুর্থ লুডভিগকে বিদায় জানাচ্ছেন। দ্বিতীয়টিতে, সেইন্ট এলিজাবেথ একজন ভিক্ষুককে তার কোট দিচ্ছেন এবং তৃতীয় জানালায় তিনি ১২২৮ সালে নিজের স্থাপন করা মারবুর্গ হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে এলিজাবেথকে।
লন্ডনে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে
২০১৮ সালে পপ আর্ট তারকা ডেভিড হকনি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের জন্য এই জানালাটি ডিজাইন করেন। পুরো ডিজাইনটিই করা হয়েছে একটি আই প্যাডে৷ উজ্জ্বল নীল, লাল, কমলা এবং হলুদ রঙে প্রস্ফুটিত হথর্ন গাছ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জানালায়। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের মুখপাত্র বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বের সম্মানে এই ডিজাইন করা হয়েছে। তার মতে এই ডিজাইন, "একজন রানিকে একজন গ্রামীণ নারী হিসাবে ফুটিয়ে তুলেছে।"
জুরিখের গ্রোসম্যুনস্টার
গ্রোসম্যুনস্টার জুরিখের একটি প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার চার্চ। চিত্রকর সিগমার পোল্কে বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে মানবপুত্র, এলাইজার আরোহণ, কিং ডেভিড, বলির পাঁঠা এবং আইজ্যাকের বলিদান এই পাঁচটি গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। এছাড়াও আরো সাতটি জানালার ডিজাইন করেছেন তিনি।
ব্যাসিলিকা অফ দ্য অ্যানানসিয়েশন, নাজারেথ
খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে, এখানেই একজন দেবদূত মেরিকে বলেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র যিশুর জন্ম দেবেন। নাজারেথের অ্যানানসিয়েশন ব্যাসিলিকা খ্রিস্টানদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। রুশ-ইহুদি-ফরাসি শিল্পী মার্ক চাগাল এই গির্জার জানালার নকশা করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সারা বিশ্বে আরও অনেক বড় আকারের কাঁচের জানালার ডিজাইন করেছেন।