গাজা পুর্নগঠনে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি
২ মার্চ ২০০৯গাজা পুনর্গঠনে দাতা দেশসমূহের এ সম্মেলনে ৭০টিরও বেশি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন৷ সম্প্রতি গাজায় ২২ দিনের ইসরায়েলি হামলার পর গত মাসে অস্ত্র বিরতি শুরু হলে মিশর সেখানে শান্তি প্রক্রিয়া ও গাজা পুনর্গঠনে সহায়তার উদ্যোগ নেয়৷ ইসরায়েলের এ হামলায় ১৩ শ'রও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয় এবং অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস হয়৷ সম্মেলনে এ পর্যন্ত গাজা পুনর্গঠন কাজের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, কুয়েত, ব্রাজিল, লেবাননসহ দাতা দেশগুলো ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে৷ ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ গাজা পুনর্গঠনে ২.৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রত্যাশা করছে৷
সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসিচব বান কি-মুন বলেন, গাজা সীমান্ত বন্ধ থাকায় সহায়তা কর্মীরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না৷ ত্রাণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না৷ এমনকি ঐ এলাকায় বাড়ি-ঘর বা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কোন উপকরণ নেই৷ তিনি অতিসত্ত্বর সীমান্ত খুলে দিয়ে গাজা পুনর্গঠনে কাজ শুরু করার আহ্বান জানান৷
সম্মেলনে বক্তৃতাকালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া থেকে গাজা পুনর্গঠন কাজকে পৃথকভাবে বিবেচনা করা যাবে না৷ তিনি বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠনে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা এবং ঐ এলাকায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার বৃহত্তর উদ্যোগকে পৃথক করা যাবে না৷ গাজা সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করে এ সহায়তা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা মহৎ লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার চেষ্টা করছি৷গাজা পুনর্গঠনে মানবিক সাহায্য করার সাথে সাথে পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে সকল শর্তের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে৷'
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র চায় যারা ইসরায়েল ও এর আরব প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে দায়িত্বশীল সম্পর্ক বজায় রাখবে৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ এ রাষ্ট্রকে নিয়ে যেন ফিলিস্তিনীরা সর্বত্র গর্ব করতে পারে এবং সারা পৃথিবীতে যেন সম্মানজনক অবস্থানে থাকতে পারে৷
সম্মেলনে ক্লিনটন গাজা পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন৷ তবে এ অর্থ হামাসকে না দিয়ে বরং জাতিসংঘ ও কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে সে এলাকার উন্নয়নে খরচ করা হবে৷ তিনি বলেন, বারাক ওবামার প্রশাসন গাজায় অবকাঠামোগত, প্রতিরক্ষা বিষয়ক এবং মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও প্রধানমন্ত্রী সালাম ফায়াদের সাথে কাজ করবে৷
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি সম্মেলনে বক্তৃতাকালে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব করেন৷ তিনি আগামী বসন্তে ইউরোপে এ সম্মেলন আয়োজনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন৷ সারকোজি এ বছরের শেষ নাগাদ ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনী উভয় পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট সময়-সীমা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান৷
এছাড়া জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার গাজা পুনর্গঠনে জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দেন৷ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স সউদ আল-ফয়সাল গাজা পুনর্গঠনে এক বিলিয়ন ডলার সাহায্যের কথা নিশ্চিত করেন৷ গত জানুয়ারি মাসেই সৌদি সরকার প্রথম এ সাহায্যের কথা বলেছিল৷
এর আগে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক সম্মেলনে বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, ২০০৯ সালের মধ্যেই সবাই ফিলিস্তিনী সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করেন৷