গণমাধ্যমে ক্রিকেটের সুনামি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১সংবাদ সংস্থাগুলোকে সাধারণত একটু মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়৷ তা'ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিরোনাম হল ‘‘এগিয়ে যাওয়ার বনাম প্রতিশোধের ম্যাচ''৷ তারপরেই দৈনিক পত্রিকাগুলোয় উচ্ছ্বাস-আবেগের বিস্ফোরণ৷ মূল চিত্রকল্পটি হল ‘টাইগারদের' কেন্দ্র করে৷ ‘গর্জে ওঠো বাংলাদেশ', এই হল সমকালের শিরোনাম৷ প্রতিবেদক লিখছেন: ‘‘গভীর জঙ্গলে নয়, বাঘ এসে পড়েছে গ্যালারি ঘেরা সবুজ দ্বীপে৷'' তারপরে সেই রূপকটির সঙ্গে যোগ করেছেন ভারতীয় সিংহের প্রতীক৷ পোর্ট অফ স্পেনেও সিংহের গায়ে আঁচড় বসিয়েছিল বাঘ৷ আর ‘‘এবার যে মাঠের এগারোর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ষোল কোটি বাঘ,'' লিখছেন প্রতিবেদক৷ আবার হাস্যরসও যে নেই, এমন নয়৷ পরে ঐ প্রতিবেদকই লিখছেন: ‘‘বিশ্বকাপে ভারত বাংলাদেশের কাছে পা পিছলে আলুর দম হওয়া একটি দল৷''
আবেগ বনাম বিশ্লেষণ
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক ঠিক সেই দ্বন্দ্বেই পড়েছেন৷ শেহবাগ বনাম তামিম ইকবাল, টেন্ডুলকার বনাম সাকিব৷ যুক্তি কিংবা ক্রিকেটীয় শক্তির বিচারে ম্যাচের ফলাফল বাংলাদেশের অনুকুল হবে না৷ তাই প্রতিবেদক লিখছেন: ‘‘কিন্তু বাংলাদেশের যে মানুষ আছে!... এই মাটির গন্ধ, এই মাঠের শক্তি, এই মানুষের উন্মেদনা মিলে যে প্রেরণার ত্রিভুজ, সেটাই বাংলাদেশের তরীকে ভেড়াতে পারে তীরে৷'' জনকণ্ঠও জানাচ্ছে, ‘এমন উন্মাদনা কখনও কেউ দেখেনি'৷ ভারতীয়রাও অবাক, ভারতীয় সাংবাদিকরাও বিস্মিত৷ প্রতিবেদকের ভাষায়: ‘‘বাঙালীর এমন ভালবাসার বিস্ফোরণ কি সচরাচর মেলে?''
সেটা দুপার বাংলার মানুষদেরই
যুগান্তরের প্রতিনিধি কলকাতা থেকে তাই জানাচ্ছেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন লিখছেন: ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে কলকাতার বহু মানুষ বুঝতে পারেননি শুক্রবার প্রভাতী সংবাদপত্রগুলো বাংলাদেশ না পশ্চিমবঙ্গের৷'' পশ্চিমবঙ্গের সব ক'টি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার, কভারেজে - প্রতিবেদকের ভাষায় - ‘‘পদ্মাপারের বাঙালিদের ঢালাও প্রশস্তি''৷
তা'হলে বিশ্লেষণ কোথায়?
ভোরের কাগজে দুই দেশের, দুই দলের অধিনায়কদের বক্তব্য৷ জনকণ্ঠে দুই দলের প্লেয়ার বাই প্লেয়ার এ্যানালিসিস৷ আর যুগান্তরের প্রতিবেদক একুশের আবেগ থেকে শুরু করে শেষমেষ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, শুধুমাত্র একটি জায়গা ছাড়া বাংলাদেশের সেরা একাদশ ঠিকই হয়ে রয়েছে৷
এবং আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই সেরা একাদশকে মাঠে দেখা যাবে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার